একটি ট্রেন থামানোর স্মৃতিময় ঘটনা লেখাঃ সাঈদ আল রবি।
দুই হাজার দুই কি তিন সালের ঘটনা হবে। তখন অনেক ছোট ছিলাম। সে সময় প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। সকাল 9 টায় স্কুলে যেতাম এবং দুপুর 1 টায় আমাদের টিফিন হত। তখন সে সময় বাড়ি আসতাম। কেননা স্কুল থেকে বাড়ি কাছাকাছি ছিল যেতে আসতে খাওয়া-দাওয়া করে টিফিন শেষ হওয়ার কাছাকাছি হত। স্কুল এবং বাড়ির মাঝে একটি রেল লাইন পড়ে। আমরা সেই রেল লাইন পার হয়েই স্কুল এবং বাড়ি যেতাম মাঝে মাঝে থেমে থেমে ট্রেন যাওয়া-আসা দেখতাম। আর ট্রেন এত ধীরগতির ছিলো যে আমরা পিচ্চিরাও ট্রেনে লাফিয়ে উঠতাম।
আমার সেই রেল লাইনের স্মৃতিময় একটি ঘটনার বর্ণনা ————–
সেদিন স্কুল ছুটির পর আমরা বাড়ি আসছিলাম। রেল লাইনের কাছাকাছি আসতেই দুজন লোক গল্প করতে করতে যাচ্ছিল। সামনে নাকি একটি পুলের সামনে রেল লাইন ভেঙ্গে গেছে। দুই লাইন দুই পাশে বাঁকা হয়ে গেছে। আমরা শুনে দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সত্যিই তো, রেললাইনের ক্লিপ খুলে গিয়ে রেল লাইন বাঁকা হয়ে আছে। আমরা সেখান থেকে চলে আসছিলাম। কিন্তু আসার সময় আমরা ট্রেনের হুইসেলের শব্দ শুনতে পেলাম। মনে মনে বিপদের ঘন্টা বেজে উঠল। আমরা তো তখন অনেক ছোট ছিলাম,তাই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো! আমাদের স্কুলের জামার রং ছিল লাল। আমরা যে ধার দিয়ে রেল লাইন থেকে রেললাইন পার হয়ে যাই,তার পাশে ছিল বাঁশঝাড়। সেখান থেকে একটি বাঁশের কঞ্চি পেরে সেই কঞ্চিতে আমার জামা বাঁধলাম।ততক্ষণে ট্রেন স্টেশন থেকে রওনা দিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলাম। আমার সাথে কে কে ছিল অতটা মনে নেই।তবে আমি,ভাইয়া,রাশিদুল ভাই(পুলিশ) সহ দু তিনজন ছিলাম। শুধু আমার হাতেই বাঁশের কঞ্চিতে জামা পড়ানো ছিল। সেই কঞ্চি পাগলের মতো ঘোরানো শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর ট্রেন কাছাকাছি আসতে থেমে গেল। আমি ভয়ে কেঁদে ফেললাম। ট্রেন থেকে ড্রাইভার এবং অন্যান্য মানুষজন নামল। নেমে দেখল সামনে রেললাইন ভাঙ্গা। তখনকার দিনে বাংলাদেশে মোবাইল আসে নি, আসলে চালু হয়নি। সে রকম ভাবে তাই ট্রেনের কর্মকর্তাগণ খবর দিতে পাঠালেন। স্টেশনে তারা গেল, আমিও বাড়ি চলে আসলাম।
বাড়ী এসে ভয়ে ভয়ে সবাইকে ঘটনা খুলে বললাম। কিছুক্ষণ পর খাওয়া দাওয়া করে সেখানে করে সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখলাম রেল লাইন ঠিক হয়েছে ট্রেনও চলে গেছে। পরেরদিন শুনেছিলাম সেখানে কাকে নাকি 200 টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তখনকার দিনে 200 টাকা অনেক বেশি ছিল। আর আমিও ছোট মানুষ ছিলাম। 200 টাকা আমাদের অনেক কাজে লাগতো। যা হোক ট্রেনটা আমি থামিয়ে ছিলাম এবং অনেক যাত্রী বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ভাগ্যিস সে সময় ফেসবুক, টুইটার ছিলো না। নইলে আমিও হিরো বনে যেতাম( হা হা হা)। পুরস্কারটা আমি পাইনি বলে আমার মন খারাপ ছিল না। আর অনেকে জানতোই না যে আমি ট্রেন থামিয়ে ছিলাম। কারণ আমি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলাম।আর আমাকে বেশির ভাগই চিনতো না।মাঝে মাঝে সেই জায়গাটা গেলে আমার এখনো সেই ঘটনা মনে পড়ে। এখনো আমার মনে হয় আমি এই জায়গায় ট্রেন থামিয়ে ছিলাম। অনেককে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে ছিলাম।মহান আল্লাহ সেই সব লোকদেরকে হেফাজতে রাখুন, যারা সেই ট্রেনের যাত্রী ছিলো আর আজো বেঁচে আছেন।
লেখাঃ সাঈদ আল রবি।
রচনাকালঃ ১২ই এপ্রিল ২০১৯।