পাহাড় চূড়ার মানুষ

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
পাহাড়_চূড়ার_মানুষ, Bangladeshi_woodcutter, amarjiboni

 লিখেছেনরিফাত হসান                                                                                                         রচনাকালঃ ১০/০৪/২০১৯

 

চারদিকে নীরবতা , মৃদুমন্দ বাতাস। হাজার বছরের কোলাহল আজ থেমে গেছে। অতীতের স্মৃতির দুয়ার  বন্ধ হয়ে গেছে।  পাহাড় চূড়া থেকে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত নেমে এসেছে সরু একটি পায়ে চলা পথ।  এই পথ যেন পাহাড়চূড়া দিয়ে মেঘোমালা ভেদ করে চলে গেছে অনন্তের পানে।  সরু পায়ে চলা পথ টি দেখেই আপনারা বুঝতে পারবেন এখানে আনাগোনা আছে মানুষের কিংবা পাহাড়ি দলবদ্ধ প্রাণীদের অথবা সকলের।  গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে যারা এই পথ দিয়ে যায় তাদের জীবন দুর্বার,  তাদের জীবন সংগ্রামের,  তাদের জীবন প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকার।  অনেকে অবশ্য শখের বশেই এ পথ মাড়ায় । আমিও তাদের একজন যে কিনা শখের বসে কোন এক শরতের  অপরাহ্ণে দুর্নিবার চিত্তে উঠে এলো পাহাড়চূড়ায় ।

এখানে আমার সাথে দেখা হয়েছিল মকবুলের।  একজন কঠোর সংগ্রামী জীবন পাড়ি  দেওয়া মানুষ।  যার জীবনে দুঃখ আছে,  আছে কষ্ট বিলাস,  আছে সুখ,  যার চোখে এখনো ভাসে আপন হাতে দাফন করার নিজ পরিজনদের মুখচ্ছবি।  মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে আজ যে চল্লিশোর্ধ্ব একজন মানুষ।  তার শৈশব-কৈশোর কেটেছিল এ পাহাড়ে।  একদিন শেষ বিকেলের কান্নার মত তার চোখের সামনেই তার বাবা-মা পাহাড়ের মাটির স্রোতে  চাপা পড়ে মারা যায়।  এরপরে অনেক বছর পেরিয়ে যায় কিন্তু সেই স্মৃতি মকবুল ভুলতে  পারে না।  তার মায়ের শেষ চিৎকার এখনো তার কানে বাজে।

 

তাঁর বিয়ে পরবর্তি জীবন ধীরে ধীরে ভরে উঠছিল সুখে। অতিতের দুঃখ ভূলে তখন চোখে ভবিষ্যতের জন্য দৃড় সংকল্প । কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায় যখন তাঁর ভালোবাসার  মানুষটিও পরপারে চলে গেলো তখন তাঁর চোখে বর্ষার বারিধারার পরিবর্তে নেমে এসেছিল এক রাশ হতাশা।

দুঃখ , ক্ষোভের মিশ্রনে তৈরি কঠোর জীবনবোধ তখন তাঁর জীবনকে ঘিরে আবর্তমান।   এত কিছুর পরেও হয়ত মকবুলের সুযোগ ছিল এ পাহাড় , তাঁর শৈশবের আবাস ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ানোর।   কিন্তু জীবনের কঠিন সব পরীক্ষার ছাত্র , ততদিনে বুঝে গেছে এ জীবন সংগ্রামের, এ জীবন টিকে থাকার। এ জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচার সহজ কোন উপায় নেই। 

 

বিপদের ঝুকি নিয়ে, সব কিছু মেনে নিয়ে হাসি মুখে চলাই জীবন!  তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে দশ দশটি বছর। এখনো কোন কোন বর্ষার দিনে মকবুলের ইচ্ছে করে পাহাড়ের সবুজে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠতে।  তাঁর ইচ্ছে হয় তাঁর মা-বাবার সান্নিধ্য  পাওয়ার। হারানো প্রিয়তমার জন্য বুকের ভেতরের হাহাকার সে বুকে গভীরেই জমা রাখে।  এ পৃথিবীর মানুষের তাঁর জন্য দরদ দেখাবার সময়ই বা কোথায়।  সবাই আসে তাঁর কাছে কাঠ কিনতে, কিনে চলে যায়। তাদের হয়ত মনে হয় পাহাড়ের মানুষের হৃদয় নেই, নেই অতীত। 

সে জানে এই সুন্দর-নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে গেলে নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে পরিবেশের সাথে মানিয়ে।

তবুও– শুধু সেই জানে  বাইরের থেকে দেখতে যতই পাহাড়ের মতই শক্ত হৃদয়ের তাঁকে মনে হোকনা কেন, তাঁর ভেতরেও বয়ে যায় আবেগের স্রোতস্বিনী নদী। সে আবেগের তোড়ে  খড়খুটর মতই সে ভেসে যায় অতিতে। 

 

 

 

                                                                                                লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে–   রিফাত হসান

 

সকল ক্যাটাগরী                                                                                                                          আমারজীবনী সম্পর্কে 

জনপ্রিয় পোস্ট সমূহ

নির্বাচিত পোস্ট সমূহ

লেখক ভিত্তিক পোস্ট সমূহ

প্রতিক্রিয়া ভিত্তিক পোস্ট সমূহ

 

 

 পদক সমূহ

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া