একজন গরীব রাজার জীবনের চাওয়া-পাওয়ার গল্প শুনবো আজ।
আমার জন্ম যশোর এ। দাদার বাড়ি ও যশোর এ। জন্মের পর থেকে নানার দেশে মানুষ। নানার দেশ বরিশাল জেলার, পটুয়াখালী থানার গলাচিপায়। আমার নানার নাম বাদশা, অনেকে আমাকেও রাজা বলে ডাকে। বয়সের কথা জানিনা,জন্মের তারিখ আমাদের মত গরীবের মনে থাকেনা, আমরা তো জন্ম দিনের হিসেব রাখিনা,প্রতিটা দিন আমরা দুই বেলা খাবারের হিসেব রাখতেই হিমশিম খাই। বয়স ১৩/১৪/১৫ হইতে পারে। জন্ম দিন আর বছরের হিসেব আমাদের জন্য না।আমি আল্লাহ যে ভাবে চালায় সেভাবে চলি।তিনি তো আমার রিজিক রাখসেন। নামে কি আসে যায় বলেন? ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখারর অনেক ইচ্ছে ছিল। কিন্তু গরীবের পেটে ভাত নাই, পড়ার খরচ কেমনে জোগাই বলেন? তার পরেও ইস্কুল এ ভর্তি হয়েছিলাম। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “আমি পড়ালেখা করিনা কেন?”লোকটা আমার মামার দোকানে প্রায়সময় আসে।
তাকে বলেছিলাম, “পেটের ভাত যোগাবো নাকি ইস্কুলের খরচ মেটাবো? ইস্কুলে পড়ার ইচ্ছে ছিল, তাই ভাতের হোটেলে কাজ নিসিলাম, সেই টাকায় স্কুলে পড়বো এমন স্বপ্ন আমারো ছিল। ওই যে মামা, বলেনা গরীবের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থাহে। হোটেল থেকে ছাড়া পাইতাম ২ টার পরে।তখন স্কুলের টাইম শেষ। তাও কষ্ট করে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পরসিলাম।এর পর আর পারিনাই, ক্লাস ফাইভের একটা পরীক্ষা দিসিলাম,সেখানেই শেষ। হোটেল মালিক বলত পড়া লেখা করে কি করবি,কাজ শিখ পরে কাজে আসবে,ছুটি পাইতামনা।”
লোকটা নৈশ বিদ্যালয়ের কথা বলল,সেটা কি আমি বুঝলাম না। আমাকে সে সময় এই নৈশ বিদ্যালয়ের কথা বলার ও কেও ছিলনা। লোকটা আমার নাম জানতে চাইলো,পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত চাইল।
বললাম, “আমার নাম ভাসান ইসলাম, অনেকে বাহাদুর ইসলাম ও ডাকে। বাদশার নাতি তাই অনেকে রাজাও ডাকে। কিন্তু নাম দিয়ে কি করব বলেন? আমারে যে নামেই ডাকেন,আমার কষ্টের জীবন তো আপনি বদলাইতে পারেন না, আমার নাম কোনটা আসল আমি নিজেই জানিনা। আজকে ঢাকায় চায়ের দোকানে চাকরি করি, আবার নানার দেশে চলে যাবো,ঢাকায় দম আটকায় আমার, নানার দেশে গিয়ে পেটের দায়ে যে কোন কাজ করব। আমি গরীবের সন্তান গরীব,কিন্তু নানার দেশে শান্তি পাই, অন্তত সেখানে আমারে সবাই রাজা বলে ডাকে, এইখানে এই মাস থেকে চলে যাবো, দম আটকায় আসে। ভাই,বাদশা নানারে দেখার জন্য মন কাঁদে আমার”
———–
ভাসান ইসলাম/বাহাদুর ইসলাম/রাজা
বয়স: আনুমানিক ১৪