আজ লিখতে বসে, সকাল থেকেই ভবাছিলাম,কার কথা লিখব, কাকে নিয়ে লিখবো। বাংলাদেশ মানেই এর সাথে জড়িত হাজার বছরের ইতিহাস। সে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ভিন্ন ও চমকপ্রদ জীবন আমাদের নাড়া দিয়ে যায়। আজ লিখবো বঙ্গের প্রাচিন এক রাজবংশের এক রাজার কথা।
রাজা অনেকেই হয়ত ছিলো, কিন্তু কত-জন কেই বা পৃথিবী মনে রেখেছে? কিন্তু বল্লাল সেন কে পৃথিবনী মনে রেখেছে। সেন রাজ বংশের ২য় রাজা বল্লাল সেন। প্রায় ১৮ বছর রাজত্ব করেন বল্লাল সেন(১১৬০-১১৭৯, রাজত্ব কাল)। বল্লাল সেন ছিলেন সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃত বিজয় সেনের পুত্র। বল্লাল সেন বিয়ে করেন রাজকুমারী রামদেবীকে। এটা ছিলো দক্ষিন ভারতের সাথে সেন রাজবংশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ইঙ্গিত ।
আসুন একবার ঘুরে আসি আজ হতে হাজার বছর আগেকার পৃথিবীতে। যখন বঙ্গ ছিলো বিভিন্ন রাজাদের অধীনে। রাজা ছিলো, প্রজা ছিলো, সে এক অন্যরকম ইতিহাস।হাজারখানেক বছর আগে ,তৎকালীন রামপাল নগরে বল্লাল সেনের জন্ম হয়। তাঁর পিতা বিজয় সেন তাঁর নাম রেখেছিলেন্ম “বর লাল” । কিন্তু কালক্রমে অপভ্রংশ হয়ে তাঁর নাম হয় বল্লাল। যাক সে কথা, শিশু বল্লালের জন্ম হলো , জন্ম হলো সেন রাজবংশের ২য় রাজার।
আচ্ছা তিনি কি জানতেন , তাঁর জীবনের হাজার বছর পরেও মানুষ তাঁর নাম উচ্চারন করবে, তাঁর নামে লিখে যাবে লাইনের পর লাইন। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, হাজার-বছর আগে জন্মানো একজনের জীবন-কথা, লিখে যাচ্ছি ২০১৮ সালে বসে। কি বিচিত্র পৃথিবীর নিয়ম।!
চলুন আবার ফিরে যাই বল্লাল সেনের কাছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি শাস্ত্র আর অস্ত্র দুই বিদ্যায় পারাদর্শিতা অর্জন করেন। বল্লাল সেন ১১৬৮ সালে রচনা করেন “দানসাগর” , ১১৬৯ এ “অদ্ভূত সাগর ” গ্রন্থের রচনা শুরু করলেও তা অসমাপ্ত থেকে যায়। সে যুগের রাজারাও সাহিত্য চর্চা করতেন! আর এখনকার রাজা-রানীরা কি চর্চা করেন জানিনা! বল্লাল সেন রচিত “অদ্ভুত সাগর” থেকে জানা যায় নিজের বার্ধক্যের সময় বল্লাল সেন রাজ্যভার নিজ-পুত্র লক্ষন সেনের উপর ন্যাস্ত করেন। রাজা তাঁর জীব শেষ দিনগুলো গঙ্গা -তীরবর্তি স্থানে ,স্ত্রী রামদেবীর সাথে কাটান।
বল্লাল সেন, পিতা বিজয় সেনের শাসনকালে মিথিলা জয় করেন। অদ্ভুত সাগর গ্রন্থানুসারে মগধে পালদের উপর চূড়ান্ত আঘাত করেন তিনি। পরবর্তিতে তিনি বগদি, রাঢ, জয় লাভ করেন। বিশ্বাস করা হয় বল্লাল সেন সামাজিক অবস্তাহ পুন্রুদ্ধার করেন। কৌলীন্য প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে।
বল্লাল সেন বঙ্গের সামাজিক সংস্কার , বিশেষ ভাবে যদি বলতে হয় কৌলীন্য প্রথা প্রবর্তনের জন্য সু-পরিচিত। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে একজন রাজা, পন্ডিত এবং লেখক হিসেবে।