শহরের জীবনের শুরু , আমার প্রিয় গ্রাম ও কিছু স্মৃতি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আমি তখন  চতুর্থ শ্রেণীতে ছিলাম। এর আগে আবার আমাকে গ্রামে তেমন একটা থাকতে দিতো না,  আমার বড় আব্বু,আর বড় আম্মু বাড়িতে আসলেই আমাকে শহরে নিয়ে যাইত  আমাকে খুব আদর ও করতেন। আবার আমি সব থেকে বেশি ভয় পেতাম আমার বড় আব্বু কে।

এবার বড় আম্মু আমার আম্মুর সাথে কথা বলে ঠিক করলেন আমাকে আর গ্রামে রাখা যাবে না,তাই আমাকে শহরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বড় আম্মু।  এর পর আর দেরিও হয়নি। সেই বছর শহরে আমার বাড়ির এক কাকার সাথে মেসে দেয়, আর সে থেকে আমার শহরের প্রথম জীবন শুরু। তার পর আমাকে রেলওয়ে স্কুল র্ভতি করিয়ে দেয়।আমার তেমন একটা ভালো লাগতো না।  সবাই বড় আমার থেকে। অনেক বড় কিন্তু আমাকে খুব আদর করতো সবাই। প্রথম কিছু দিন ভালোলাগলেও,  পরে খুব খারাপ লাগতো আম্মু দের জন্য, সব সময় লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করতাম কিন্তু কাউ কে বুঝতে দিতাম না। এই ভাবে কেটে গেলো একটি বছর আর দিন গুলা কেটেছে ঘুম আর খেলা দিয়ে কারন সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত থাকতেন আমার সেই কাকা টা ও সারা দিন এর সব কাজ শেষ করে বাসায় আসতেন রাত ৯/১০ টার দিকে। আমাকে যে কারনে বড় আম্মু শহরে আনলেন সেটা সে সময় আর হলো না, কারণ আমি সেই স্কুলে রেজাল্ট খারাপ করি।

আর আমার স্কুলে বন্ধু ছিলো মাত্র দুই জন। সেই সময় কি করছি আর কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতাম না, মনে হতো সবাই আমার ভালো চাচ্ছিলো না। এতো কিছু হওয়ায় পর ও বড় আম্মু একটু ও বকা দেয় নি,তিনি বললেন যে সাকিব পারবে সমস্যা নাই। এটা থেকে আমি নিয়ে ও মনে করতাম না আমাকে পছন্দ করে এমন এক জন তো আছে,আর সেটা হলো বড় আম্মু।  কিন্তু অন্য দিকে আমার বড় আব্বু ছিলো খুব রাগি, তিনি এক কথায় বলেন ওরে দিয়ে হবে না এবং খুব বকাঝকা করেন। আবার সেই সময় আমার দেখা শুনার সব দায়িত্ব বড়আব্বুর ছিলো। কিন্তু বড় আম্মু হাল ছাড়তে রাজি নাই,  তাই তিনি ঠিক করলেন তাদের বাসায় রেখে আমাকে পড়াবেন এবং দরকার হলে ১/২ টা ভালো স্যার ও রাখবেন। এর পর আমাকে “শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ ইন্সটিটিউট” এ আমাকে র্ভতি পরিক্ষা দিতে হয়, কিন্তু আমি পরিক্ষায় টিকতে পারি নাই। এর পর বড় আম্মু স্যার দের সাথে চেলেঞ্জ নিয়ে আমাকে অনেক কষ্ট করে র্ভতি করান এবং আমাকে বড় আম্মু সে সময় বলেছিলো,আমার সম্মানটা রাখিস আর পড়লে মন দিয়ে পড়বি।এবং আমি বড় আম্মুর কথা রাখতে পারলাম এবং ভালো রেজাল্ট ও করতে শুরু করলাম। কিন্তু এর আগে আমাকে চতুর্থ শ্রেণীতে আমাকে দুই বছর থাকতে হয়। এর প্রথম কারণ ছিলো আমি গ্রাম থেকে শহরে এনে আমাকে চতুর্থ শ্রেণীতে আবার র্ভতি হতে হয়।  আমার জন্য সে সময় দুই জন স্যার রাখা হয় বাসায়। আমার প্রাইমারি জীবন ভালো রেজাল্ট দিয়ে শেষ হল।

 

শুরু হলো হাই স্কুল এর জীবন  গেলাম স্কুলে নুতুন করে ষষ্ট শ্রেণিতে র্ভতি হতে,এক বন্ধু এসে বলে তুই কোন সেকশন এ র্ভতি হবি?? আমি উত্তরে বললাম আরে একটাতে হলেই হলো। কিন্তু আমার সেই বন্ধু মনির বলে A সেকশন এ ভুলেও র্ভতি হইস না, কেন জানতে চাইলে বলে A সেকশন এ “আলিম উদ্দিন” স্যার পড়া না পারলে খুব মারে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাহলে B সেকশন এ র্ভতি হবো, সেই দিন আর র্ভতি হলাম না কারণ মনির সে দিন টাকা আনে নাই।  তাই দুইজন ঠিক করলাম এর পর দিন র্ভতি হবো এবং এর পরদিন র্ভতি হলাম। সে সময় আবার মনির আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। পরে অনেক বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়।আমি আবার আমার বড় আব্বু কে সে সময় খুব ভয় পেতাম। বড় আব্বু বলে দিয়েছে সব সময় প্রথম ব্যাঞ্চ এ বসবি এবং রোল এক এর সাথে বন্ধুত্ব  করবি। তাই আমি আর মনির সব সময় প্রথম ব্যাঞ্চ এ বসতাম এই ভাবে এক মাস চলে গেলো এবার আমাদের ক্লাস টিচার্স ক্লাসে তিন জন ক্লাস কেপ্টেন নির্বাচন করা হবে। আর এই এক মাসে সবার সাথে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেল, এখন ও মনে আছে স্কুলে প্রথম গেলে কাগজ আর সাদা টেপ দিয়ে মোড়ানো বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতাম আর ব্যাট হিসেবে সবাই বাসা থেকে ডায়েরি আনতাম। আমি আবার সবার থেকে ভালো খেলতাম, আমি,সামির,কাইউম না খেললে মনে হয় খেলাই হতো না। আর এর মধ্যেমে ক্লাসে সব বন্ধুর কাছে প্রিয় হয়ে উঠলাম।

 

এবার যখন ক্যাপ্টেন র্নিবাচন সবাই আমাকে নিয়ে টানা টানি করতে লাগলো এবং আমি আবার সব সময় ক্লাস এ যেতাম এবং ফাস্ট ব্যাঞ্চ এ বসতাম সব মিলিয়ে সাজ্জাদ  স্যার ও আমাকে পছন্দ করতেন।তাই সাজ্জাদ স্যার আমাকে ফাস্ট কেপ্টেন হিসেবে নির্বাচন করেন আর এবং এই ভাবে ষষ্ঠ শ্রেণি শেষ হল। আবার নুতন ক্লাস এই ভাবে সপ্তম/অস্টম শ্রেণিতে ও আমি ক্লাস এর সেকেন্ড কেপ্টেন ছিলাম।কিন্তু অস্টম শ্রেণির শেষ দিকে আমি অনেক দুষ্টামি শুরু করলাম, আর এর হয়তো অনেক কারণ আছে যা প্রকাশ করা যায় না, রেখে দিতে হয় নিজের হৃদয়ে । আর এই ভাবে SSC পরিক্ষা দিলাম এবং ভালো রেজাল্ট ও করলাম। আর SWI স্কুলে আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো আইছম,পুলব,মাসুদ, মনির,ফাহিম আর জোজো।  আর বেশির ভাগ সময় চলাফেরা ছিলো এদের সাথে।

 

আমার জীবনের বলতে গেলে পুরো  সময় টা কেটেছে শহরে, খুব ইচ্ছা করতো যেতে কিন্তু সেটা হতো না, গ্রামে যেতাম ঈদ আর কোরবান এ গেলেও বেশি দিন এর জন্য না এই ৭-১০ দিন এর বেশি না,আবার গ্রীষ্মের সময় স্কুল বন্ধ দিলে পুরো ১০ দিন থাকতাম। কিন্তু এর মধ্যে কোন কাজ থাকলে বাড়ি যাওয়া হতো, কিন্তু দিনে গিয়ে দিনে চলে আসতে হত। তাই গ্রামের সব বন্ধুরাই আমি বাড়ি গেলে ঠেস মেরে কথা বলতো, কেন আসলি!  একটু পরেই তো চলে যাবি?? তার থেকে ভালো না আসতি, এটাই ভালো ছিল।

 

কিন্তু SSC পাশ করার পর আমি অনেক দিন গ্রামে ছিলাম প্রায় এক বছর এর উপরে আর আমার জীবনে হয়তো এই বছরটাই সব থেকে আনন্দের এবং সেরা বছর ছিল। আর এটাই ছিল আমার গ্রামে এতো দিন থাকা।  ছোট বেলা থেকে আম্মু,আব্বুর থেকে দূরেই থাকতে হয়েছিল। আজ চিন্তা করি সে সময় টা তে যদি মা,বাবার থেকে এতো দূরে না থাকতাম, তাহলে আজ হয়তো এতোটুকু আসতে পারতাম না। কিন্তু আমার কাছে গ্রামের এই সময়টাই ছিলো সব থেকে আনন্দের। কারণ মা,ভাই,বোন এর সাথে ছিলাম আর এর আগের সময় গুলা ছিল পাখির বাসার মত বন্দি,আর শহরের জীবন টা তো এমন হয়। কিন্তু গ্রামের জীবনটা ভিন্ন খোলা আকাশে পাখি যেমন উড়ে ঠিক তেমন। হয় তো এর আগে নিজের গ্রাম সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতাম না,আর আমাদের এলাকা যে অনেক প্রাকৃতিক জিনিস দেখার আছে সেটাও জানতাম না।কিন্তু সেই সময় থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি এবং অনেক কিছু দেখেছি যা আমি কল্পনা ও করি নি যে আমাদের এলাকায় এতো কিছু আছে।মোটামুটি সেই বছর নিজের পুরো এলাকা  ঘুরা হলো এবং মানুষ গুলোকে ও চেনা এবং বুঝা হলো।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া