আমার বাবা অনারারী ক্যাপ্টেন (অবঃ) মোঃ কামাল উদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৩য় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন এবং সেখান থেকেই সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। পরবর্তীতে ফুলবাড়ী,বিরামপুর, হাকিমপুর, জয়পুরহাট, হিলি, সিলেট, ছাতকসহ বিভিন্ন যায়গায় যুদ্ধ করেন।
বাবার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ফেসবুকে লিখে রাখছি এক এক করে। সব ঘটনাগুলো বাবার বয়ানে উপস্থাপন করছিঃ
৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পরে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্থানী ও বাঙালী সেনাসদস্যদের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। আমাদের প্লাটুনে দুদু মিয়া নামে এক সৈনিক ছিলো। তার বড় ভাই লাল মিয়া ১৯ মার্চ ১৯৭১ এ আমাদের এখানে বেড়াতে আসে। কিন্তু রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না। পরে উনাকেও অস্ত্র চালানো শিখিয়ে আমরা এখানে রেখে দেই। শেষ পর্যন্ত লাল মিয়াও আমাদের সাথে যুদ্ধ করেন। আমাদেরকে প্রতি রাতে সতর্ক থাকতে বলা হতো। কবে যুদ্ধ লেগে যায় ঠিক নাই। প্রতিদিন মনেহয় আজ রাতেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
২৭ই মার্চ সকালে হাবিলদার মেজর আলতাফ হোসেন সবাইকে জানালেন যে উনি রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে পেয়েছেন। কোন কোন সৈনিক অবশ্য এতে সন্দেহ প্রকাশ করে। উনি বললেন, “ঠিক আছে। আমি আবার শুনামাত্র অবশ্যই তোমাদের শুনাবো।”
২৭শে মার্চ সারাদিন আর শোনা যায়নি। ২৮ মার্চ আমরা সবাই রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনলাম। বুঝতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আগে থেকেই আমরা প্রস্তুত ছিলাম তবে সন্দেহ ছিলো সেনাবাহিনী যুদ্ধে তখনই নামবে কি না! কোন বাঙালী অফিসারও আমাদেরকে ঠিকভাবে বলতে পারছিলো না। তবে ঘোষণা শুনে সেই সন্দেহ দূর হয়ে গেলো।
আমাদের ব্যাটালিয়নকে বাঁচানোর জন্য আমরা পরিখা খনন করি। আমাদের প্লাটুন থেকে ৩ টি পরিখা খনন করা হয়। সবার সামনের পরিখা অর্থাৎ ১ নং এর দায়িত্ব পাই আমি আর কামরুজ্জামান।
২৬ মার্চ থেকে আমরা রাতে আর ঘুমাইনা। ২৭, ২৮ দুই রাত জেগে ছিলাম তবে কোন আক্রমন হলো না তখন। ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় প্রস্তুতি নিয়ে নিজ নিজ পরিখায় চলে গেলাম। আমার সাথে ছিল নতুন সৈনিক কামরুজ্জামান। পরিখায় অবস্থান নিয়ে আমরা অপেক্ষা করছিলাম।
রাত বারটা বাজার সাথে সাথে মেশিন গান, আর্টিলারি গান, ৪” মর্টারসহ আমাদের ব্যাটালিয়নের উপর অবিরাম গোলা বর্ষণ শুরু হয়। সম্পূর্ণ আকাশ লাল হয়ে উঠে। মনে হচ্ছিল আগুনের বৃষ্টি হচ্ছে।গোলাগুলির আওয়াজে কান ঝালা-পালা হয়ে যাচ্ছিল। মাথা ঠনঠন করছিল, চারিদিকে কিছুই দেখা যায় না, শুধুই আগুনের স্ফুলিংগ আর গোলার খোসা ঊড়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। সারারাত অবিরাম গুলি বর্ষণ হল।ভোরের দিকে কমে এল একটু। থেমে থেমে গুলি করতে লাগল পাকিস্থানীরা। আমরাও প্রতি উত্তর দিচ্ছি মাঝে-মধ্যে। কিন্তু পরিখা থেকে মাথা উচু করতে পারছিলাম না, উচু করলেই গুলি লাগার সম্ভাবনা ছিল। সিগনাল কোম্পানীর অফিসের উপর বালির বস্তা দিয়ে একটি মেশিনগান বসিয়েছে পাকিস্থানীরা। গুলি করলেই আমাদের উপর পড়ছে। আমরা নিচে হওয়ায় ঠিকমত গুলি করতে পারছিলাম না। এরিমধ্যে লক্ষ্য করলাম একটি জীপ সহ ১০৬ এম এম রাইফেল নিয়ে পাকিস্থানীরা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে!
অবস্থা বেগতিক দেখে আমি আর কামরুজ্জামান ঐ জীপের চাকা লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করলাম। গুলি লেগেছিলো কিনা জানি না। কিন্তু জীপ সামনের দিকে আর অগ্রসর হচ্ছিল না।
সারারাত এভাবে চললো। সকাল ৯টা কিংবা সাড়ে নয়টার দিকে কামরুজ্জামানকে বললাম এখানে থাকা নিরাপদ নয়। আমাদেরকে পিছনে থাকা সৈনিকদের সাথে যোগ দিতে হবে। উল্লেখ্য ১নং পরিখাটি আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য একেবারে সম্মুখভাগে ছিল।কামরুজ্জামানকে বললাম তুমি আগে যাও। সাবধানে যাবে। এখন দিন হওয়ায় পিঠ উচু করলেই গুলি লাগার সম্ভাবনা থাকবে। তাই ক্রলিং করে করে এগুতে বললাম। রাস্তা নির্মাণের জন্য পাথর রাখা ছিল। তার উপর দিয়ে কামরুজ্জামান ক্রলিং করে এগিয়ে গেল। ঐদিকে কিছু বিহারীর ঘর ছিলো। কিন্তু বিহারীর ঘর পর্যন্ত গিয়ে খেয়াল করলাম সে আর এগুচ্ছে না। মনে করলাম হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি ক্রলিং করা শুরু করলাম। কামরুজ্জামানের কাছে যেতেই দেখলাম সে মৃত। দেশের জন্য শহীদ হয়ে গেলো কামরুজ্জামান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সাথে সাথে আমার হাত-পা কাঁপা শুরু করল! আমি ভয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। অল্পক্ষণ পর মাথায় আসল পাকিস্থানীদের গুলিতো কামরুজ্জামানের গায়ে লাগার কথা না। তাহলে গুলি কোনদিক থেকে আসল? সাথে সাথে আমি বিহারীর বেড়ার ঘরের দিকে আমার মেশিনগান তুলে ব্রাশ ফায়ার করতে লাগলাম। দুই ম্যাগজিন ফায়ার করে বেড়া ঝাঝরা করে ঘরে ঢুকে দেখলাম বিহারী রতন পড়ে আছে। গায়ে দুটি গুলি লেগেছে কিন্তু বেঁচে ছিল। তার হাতে দেখলাম একটি ৩০৩ রাইফেল। আমাকে দেখে সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,”হামকো মাফ করো। খোদা কি লিয়ে হামকো রহম করো”।
আমি তখন ওর গলা ধরে বললাম কামরুজ্জামানকে তুই মারছ নাই হারামীর বাচ্চা! সে জবাবে বলল,’ও হামারী তরফ আরেহী থি। ইসলিয়ে ম্যায়নে মারা’। আমি দেরী না করে দ্রুত একটা ব্রাশ ফায়ার করে বিহারী রতনকে পরপারে পাঠিয়ে দিয়ে কামরুজ্জামানের লাশের কাছে ফিরে গেলাম।
কামরুজ্জামানের লাশ পিঠে নিয়ে ক্রলিং করা শুরু করলাম। ১০ ফুট জায়গা যেতে আমার ২০ মিনিট সময় লেগেছিল। বড় রাস্তার কাছে পৌঁছে দেখলাম লাশ নিয়ে রাস্তা পেরোনো সম্ভব নয়। একেতো ওরা আমাদের দেখে দেখে ফায়ার করছে তার উপর কাঁদে শহীদ কামরুজ্জামানের লাশ। লাশ রেখে সাইড ক্রলিং করে আমি রাস্তা পার হয়ে আমি সিপাহী আনছারের কাছে পৌছলাম। তাকে কামরুজ্জামানের শহীদ হওয়ার খবর দিলাম। কিন্তু মনোবল অটুট রাখার জন্য বললাম, অন্যদের জানাইও না এই খবর। আমাদের মাত্র ৬ সৈনিকের মধ্যে একজন চলে যাওয়ায় আমাদের মনোবল কিছুটা কমে যায়। তবে হার মানার তো সুযোগ নেই।
আনছারসহ কিছু সামনে গিয়ে সৈনিক দুদু মিয়াকে পেলাম যে কিনা তার মেশিনগান দিয়ে পাকিস্থানীদের দিকে ক্রমাগত ফায়ার করে যাচ্ছিল! কিন্তু গুলি সামনে ও বামে দু দিকেই বেরুচ্ছিল। পরে খেয়াল করলাম অতিরিক্ত ফায়ারিং এ ব্যারেল গরম হয়ে গলে যাওয়ায় এমন হচ্ছিল। আমি দুদু মিয়ার মেশিনগানের ব্যারেল পাল্টে দিয়ে বললাম আমি ও আনছার রাস্তার ঐ পাড় থেকে শহীদ কামরুজ্জামানকে আনতে যাচ্ছি। তুমি আমাদের কাভারিং ফায়ার দিও। আনছারসহ গিয়ে কামরুজ্জামানের লাশ রাস্তা পার করতে না করতেই সিগন্যাল কোম্পানীর অফিসের উপর থেকে পাকিস্থানীদের ব্রাশ ফায়ার শুরু হল বৃষ্টির মত। মুহূর্তেই একটি গুলি আমার ডান হাতের কনুই এ লেগে এপাশ থেকে ঐপাশে বেরিয়ে গেল। তীব্র যন্ত্রণায় আমি কাতরাতে লাগলাম। নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে পাকিস্থানীদের ফায়ারিং রেঞ্জ থেকে আনছার ও কামরুজ্জামানের লাশসহ সরে আসি।
(চলবে)
আমাদের এদেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিলো। সে মুক্তিযুদ্ধ কোন কল্পকাহিনী নয়। লাখো শহীদের জীবন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ।
*********************
বাবার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ফেসবুকে লিখে রাখছি এক এক করে। ঘটনাগুলো বাবার বয়ানে উপস্থাপন করা হয়েছে।
হিলির যুদ্ধঃ
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে আমরা যুদ্ধ করতে করতে সৈয়দপুর থেকে
ফুলবাড়ী-বিরামপুর-হাকিমপুর হয়ে হিলিতে এলাম।
আমাদের ৩য় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১১ নং প্লাটুন বি.এইচ.এম. আলতাফের নেতৃত্বে কোথায় চলে যায় আমরা কেউ জানতাম না। বিরামপুরে পাকিস্থানী বাহিনী আক্রমনের পরে বিভিন্ন কোম্পানী, প্লাটুন, সেকশন যার যার অবস্থান থেকে নিজ দায়িত্বে হাকিমপুর চলে যায়। তবে হাকিমপুরে পাক বাহিনীর অনবরত আর্টিলারী ও মর্টার আক্রমনের মুখে হাকিমপুর অবস্থান না করে যে গ্রুপ যেভাবে পারে ভারতে ঢুকে পড়ে। ভারতীয় জনগন আমাদের সাদরে গ্রহন করলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদেরকে হিলি পয়েন্টে আটকে দেয়। ওদের যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু তোমাদের কোন সরকার নেই তাই আমরা তোমাদের ভারতে থাকতে দিতে পারছিনা। তবে তোমাদের আমরা যথাসম্ভব সাহায্য করবো। উল্লেক্ষ্য, তখনো অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়নি।
তখন আমাদের মনোবলে কিছুটা ভাটা পড়েছে। অস্ত্র আছে তবে গোলাবারুদ খুবই কম। খাবার নেই কোন৷ উপোষ করে দিন কাটাচ্ছি। কাপড় বলতে শুধু পরনের কাপড়টিই আছে। অতিরিক্ত ময়লা হয়ে যাওয়ায় সেটিও পড়ে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গোসলের কোন ব্যবস্থা নেই আপাতত। ঐ সময় ভারতীয় বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা আমাদের ছবি তুলতে আসে এবং কারো কারো কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নেয়।
রাতে ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন আমাদের কোম্পানী গুলোকে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে পরিখা খনন করার নির্দেশ দেন। রাতে পরিখা খনন করে অভুক্ত অবস্থায় দুই/তিন দিন অবস্থানের পর ৬/৭ বছরের কিছু ছেলে এসে আমাদের খাবার জন্য ভাত দিয়ে যায়। কোন তরকারী ছাড়া সেই সাদা ভাত আর পুকুরের পানি খেয়ে কোনমতে আমাদের জীবন চলছিলো। এভাবে ৩ দিন ৩ রাত কাটানোর পরে শুরু হলো পাকিস্থানী বাহিনীর আক্রমন। একটা নয় দুইটা নয় একসাথে ৩০/৪০ টা বোম আমাদের পজিশনে একসাথে পড়ে। আমাদের বেশ কিছু ট্রেঞ্চ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এতে। একটা বোমা এসে পড়লো সহযোদ্ধা রেজাউলের উপর। বোমার আঘাতে আমাদের সিপাহী রেজাউলের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমারা তার হাতের কয়েকটি আঙুল ছাড়া আর কিছুই পাইনি। শহীদ রেজাউলকে হারাই আমরা। এভাবে চোখের সামনে সহযোদ্ধাদের দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে দেখছি প্রতিদিন। এই আক্রমনে আরো চারজন আহত হয় আমাদের। সারারাত এভাবে আমাদের উপর আক্রমন করে ওরা। সকালে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি আর কাঁদা উপেক্ষা করে ফায়ারিং করে করে আমরা ওদের ধাওয়া দিয়ে দুই গ্রাম পার করে নিয়ে যাই। দিনভর যুদ্ধ করলেও সন্ধ্যায় ওরা আবার বোম্বিং শুরু করলে আমরা পিছু হটে আগের অবস্থানে ফিরে আসি। আমাদের অনেকে আহত হয়। কোম্পানীর লেন্স নায়েক বক্সার মোঃ আলীর একটি পা ভেঙে যায়।
ঐ দিন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে আমরা সেই রাতে ভারতে প্রবেশ করি। এদিকে পাকিস্থানীরা প্রবল চাপ সৃষ্টি করে হিলির দখল নিয়ে নেয়। আর আমরা হতাহতদের চিকিৎসার জন্য কলকাতা ও অন্যান্য যায়গায় ভারতীয়দের কাছে পাঠাই। যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া আমাদের পাঠানো হয় ভারতের দক্ষিন দিনাজপুরের ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। প্রথম দিন কোন খাবার পেলাম না আমরা। ক্ষুধা নিয়ে খালি মেঝেতে জুতা/ইট মাথায় দিয়ে অস্ত্র বুকে নিয়ে পড়ে রইলাম দেশ স্বাধীন করার অদম্য স্বপ্ন নিয়ে।
আমাদের এদেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিলো। সে মুক্তিযুদ্ধ কোন কল্পকাহিনী নয়। লাখো শহীদের জীবন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ।
আমার বাবা অনারারী ক্যাপ্টেন (অবঃ) মোঃ কামাল উদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৩য় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন এবং সেখান থেকেই সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। পরবর্তীতে ফুলবাড়ী,বিরামপুর, হাকিমপুর, জয়পুরহাট, হিলি, সিলেট, ছাতকসহ বিভিন্ন যায়গায় যুদ্ধ করেন।