রকিব চাচার গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
সাঈদ আল রবি

 পর্বঃ১

রকিব চাচার সাথে পরিচয় হয়েছিলো এক বিরাট ঘটনার মধ্য দিয়ে! আমি তখন কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। একদিন কলেজ থেকে বন্ধু বান্ধব মিলে হইহুল্লোর করতে করতে বাসায় আসছিলাম। হঠাৎ হরহর করে একটা তার ছেঁড়া সাইকেল এসে সোজা আমায় লাগিয়ে দিলো। আমি হাতে প্রচুর ব্যাথা পেলাম। সেই ব্রেক ছাড়া সাইকেলের মালিক ছিলেন তিনি। আমাদের হইহুল্লোরে তিনি সাইকেলের কন্ট্রোল হারিয়ে আমার উপর তুলে দিয়েছেন। ততক্ষণে আমার মেজাজ তিরিক্ষি! চাচার সেই সাইকেল খানা তুলে ছুঁড়ে মারলাম রাস্তা থেকে ক্ষেতবাড়িতে! রকিব চাচা তো মহা গরম দেখানো শুরু করলেন, নানা ভাবে হুমকি দিলেন। আমরা মনে করলুম তিনি কলেজের কোন কাঠমিস্ত্রি হবেন,কলেজে কাজ করতেছিলেন। আসলে আমরা যে কতটা ভুল ভেবেছিলাম, তার প্রমাণ পেলাম সেদিনই বিকালে। তিনি আসলে একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী, অথচ দেখলে বোঝাই যায় না যে তার বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। বাড়িতে বিচার দিয়ে গেছিলেন, ভাগ্যিস বড় ধরনের দুর্যোগ ছাড়াই সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। যাহোক, আমরা খবর পেলাম তিনি নাকি কলেজের পাশে জমি কিনেছেন আর সেখানেই বাড়ি করছেন। তাই বাড়িতে বিচার দেওয়ার প্রতিশোধের উপায় খুঁজতে লাগলাম। কিছুদিন পর আমাদের বাড়িতে মুরগী তা দিয়ে বারোটা ডিমের মধ্যে আটটিতে বাচ্চা ফুটলো আর বাকি চারটা ফুটলোই না। সেই নষ্ট ডিমগুলো খুব ভালো মত ধুয়েমুছে পলিথিনে মুড়িয়ে রেখে দিলাম চাচার বাড়ি যাওয়ার রাস্তায়! আমি জানতাম চাচা এই সময়ে বাড়ি ফিরবেন, তাই আমিও রাস্তার পাশে ভুট্টা ক্ষেতে চুপটি মেরে বসে রইলাম। যথারীতি চাচা এলো, ডিমগুলো দেখে সাইকেল থেকে নামলো। তারপর ডিমগুলো হাতে নিয়ে একা একা কি যেন বললো। এরপর চাচা সাইকেলে চড়ে ডিম নিয়ে চলে গেলো। আমিও যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তার পিছন পিছন চললাম। তাঁর বাড়িতে কি ঘটলো তা জানা হলো না,কিন্তু কিছুক্ষণ পর বমির আওয়াজ এলো। তার কিছুক্ষণ চাচী হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে এলেন। আমি রাস্তায় ভদ্র ছেলের মত হাঁটছি, চাচীকে অমন দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে আর কিছু সাহায্য করতে পারি কিনা! চাচী বললো, “আর বইলেন না বাবা,আপনের চাচা কই থাইকা জানি একহালি পঁচা ডিম আনছে সিদ্ধ কইরা খাবে।হঠাৎ একটা ডিম পইড়া গেছে, সেই ডিমের দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যাইতাছে না”। মনের মধ্যে খ্যাক খ্যাক হাসি চাঁপা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম, চাচা নাক চেপে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আর সেখানে থাকলাম না। তারপরের দিন চাচার বিভৎস মুখখানিতে ঘানার মানচিত্র দেখে আমি বরাবরই আনন্দ ও মজা পেয়েছিলাম।

 

পর্বঃ২ 

 

রকিব চাচার সাথে মজা করাটা আসলে কিছু কারণে হতো। রকিব চাচা হলো প্রচন্ড বদমেজাজি। তার এই মেজাজের কবলে বেশ কয়েকবার আমাকে পড়তে হয়েছে। তার মধ্যে একদিন আমাকে ওনার বাসায় আটকে রেখে তিনটা ভাবসম্প্রসারন আর দুইটা রচনা মুখস্ত করিয়ে ছেড়েছিলেন। ভাবসম্প্রসারনের মধ্যে “অন্যায় যে করে…….অপরাধী” ছিলো। চাচার তিনখানা সুন্দরী মেয়ে আছে। তারা সবাই ফাজলামোর উপর ডিগ্রী নিয়েছে। অবাক ব্যাপার হলো, তারা তিনজনই আমার নাম ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উল্টিয়ে বলতো! চাচার মাথায় ইয়া বড় টাক টা দেখেছিলাম পরিচিত হবার আরো এক বছর পর। একদিন রাস্তা দিয়ে বাড়ি আসার সময় তেনার বাহিনীটুপিকে হাওয়া মশাই উড়িয়ে নিয়ে গেছিলো সোজা পুকুরে। আর খালি মাথায় তিনি বাড়ি আসার সময় দেখেছিলাম তার স্টেডিয়াম বিশিষ্ট টাকখানি। এই টাক নিয়ে কেউ কোন কথা বললে তিনি হরেক রকম কথা শুনিয়ে দিতেন। একদিন চাচার সাথে বাজারে দেখা হলো।তিনি সবাইকে অনেক গর্ব করে বলতেছেন যে তিনি ইয়া বড় একটা মাছ কিনেছেন ৬০০ টাকা দিয়ে। আমি কৌতূহলী হয়ে সেই মাছ দেখতে চাইলাম। তিনি মাছ দেখাবেন না,আবার সবার সামনে কিছু বলতেও পারছেন না। শেষমেস অনেক কিছুর পর ব্যাগ খুলে দেখি ব্যাগের কোণে পোয়া খানেক পুটিমাছ দাত কেঁলিয়ে হাসতেছে। চাচার এহেন বড় বড় কথার তোড়ে আমি লজ্জায় পালিয়ে বাঁচলাম।রকিব চাচা অনেক ভালো ও সাহসী মানুষ হলেও তিনি চাচির সামনে নিতান্তই একজন ভীতু মানুষ। মাঝে মাঝে চাচি নাকি তাকে মারধরও করে বলে শোনা যায়। একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলাম, রাস্তায় চাচার সামনে পড়ে গেলাম। আমি তার সামনা সামনি হই না, তাই তড়িঘড়ি করে রাস্তার পাশে ছোট পুকুরে নেমে গেলাম। আমাকে দেখে চাচা বললেন, রবি ওখানে কি করো? বললাম,চাচা একটা বড় মাছ ধরেছি কিন্তু ডুব দিতে পারছিনা। চাচা শুনে মহা খুশিতে লাফাতে লাফাতে এসে পুকুরে নামলেন। এসেই আমার পাশে ডুব দিলেন। আর আমি? উঠে মারলাম দৌড়! এখন চাচার সাথে আর দেখা হয় না,হলেও খুব কম। এইতো কয়েকদিন আগে তাঁকে দেখলাম তিনি গোঁফ রেখেছেন। আমি সামনে পড়তেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো,গোঁফে তাকে কেমন মানিয়েছে। আমি বললাম, চাচা আপনাকে বলিউডের সালমান খানের মত দেখাচ্ছে!চাচা গোঁফ পাকিয়ে বললেন সত্যি? বললাম, হ্যা চাচা সালমান খানকে অবশ্য গোঁফে ছ্যাঁচড়া ছ্যাঁচড়া লাগে। একথা শুনে চাচা সোজা হাটা ধরলেন। পরের দিন আর তার মুখে গোঁফ দেখিনি। এখন আমিও ব্যস্ত, চাচাও ব্যস্ত, তাই চাচার সাথে দেখা হয়না। আমি দোয়া করি চাচাকে যেন আল্লাহ অনেক ভালো রাখেন। কারণ তার সামনে পড়লে আমার মনে হয় আয়ু বৃদ্ধি পায়।

                                                      ————— (সমাপ্ত)।                                                                                        

 

                                                       ——————– সাঈদ আল রবি –

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া