মোঃসাইমুন- বন্ধুত্বের আগের ও পরের গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আমার বন্ধুর সংখ্যা খুবি কম ছিলো। স্কুল লাইফেও এবং কলেজ লাইফেও। নাসিরাবাদে যখন ছিলাম সেসময়ের কিছু বন্ধু ছিলো, তাদের মধ্যে বেশ কিছু এখনো বর্তমান আছে। সবার কথা তো আর একদিনে বলা জায়না। আর এটা সত্য যেঁ, সবসময় সবার সাথে জড়িয়ে থাকা সব ঘটনা মনে পড়েনা। আজকে যেমন লিখতে বসে বারবার সাইমুনের কথা মাথায় আসছে।

amarjiboni,jonaid

যদিও আমাদের বন্ধু-চক্রে তার আগমন অনেকেরি পরে। কিন্তু পরে এসেও সাইমুন ভাই জায়গা পোক্ত করে নিয়েছেন সবার মাঝে আপন মহিমায়। চলে যাচ্ছি প্রথম দিককার কথায়। তখন কলেজের মাত্র প্রথম দিন গুলো কাটছিলো। কলেজে নিয়মিত যেতাম না। গেলেও নিয়মিত সীটে বসা হতনা। “একদা এক কারন বসত আমি কলেজে নিয়মিত হইলাম”। সে কথা অন্য কোন একদিন বলব।

কলেজে প্রথম দিকে মাহামুদ আর মিজবাহ এর সাথেই দহরম মহরম বেশি ছিলো। বাকিদের সাথে মিশতে চাইলেও মিশতাম না। কারন আমি ধীরে মিশি বেশি মিশি টাইপের ছিলাম। দেখতে দেখতে তনিমা,জোহরা,তূর্না আর বাকিদের সাথে পরিচয় হয়। সবার কথা লিখে যাবো, হঠাৎ কোনদিন যার কথা বেশি মনে পড়বে তারটা লিখে ফেলব ক্ষন!

একটা ছেলে প্রায় মোহসিন কলেজের করিডোরে আমি যাওয়ার সময় বলত, “… ভাই তো …ভাই”। নিজের নামে প্রতিদিন একি ছড়া শুনে শুনে মাথায় রক্ত চড়ে যেত। তবুও নির্বিকার একধরনের হাসি দিয়ে ইজ্জত সমেত  কেটে পড়তাম। মাঝে মাঝেই তাকে দূর থেকে দেখেই ভয় হত, এই বুঝি এসে ছড়া কাটা শুরু করবে। যাক সে কথা সাইমুনের নামেও যেঁ এক বিশেষ ছড়ার আবিষ্কার ললনারা করে ফেলবে তা আগে জানলে সাইমুনের ছড়ার উপর এত্ত রাগ হতোনা।  কারন সাইমুনের জন্য রচিত ছড়ার তেজ ছিলো আরো বেশি আরো ভয়ঙ্কর ।

amarjiboni, jonaid

সাইমুনের আমাদের বন্ধু-চক্রে আবির্ভাবের দিনটি ছিলো একটু  এরকম্‌…আমরা যাচ্ছিলাম একটা রাইডার জাতিও গাড়ি ভাড়া করে ঘুরতে। সে সময়টায় অবশ্য আমরা প্রচুর ঘুরতাম,এখন আর হয়ে উঠেনা… দূরত্বটা হয়ে পড়েছে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। তো, যা বলছিলাম, আমরা যাচ্ছিলাম  ,গাড়ি তখনো ছাড়েনি মিজবাহ-ই আমাদের বলল বোধয়, সাইমুন ও যাবে। তখনো সাইমুন আমাদের সাথে ঘোরাঘুরি শুরু করেনি। আমরা সাইমুন কে কয়েকজনে ডাকলাম, সাইমুন পাশ এ দাঁড়িয়ে ছিলো একটা হলুদ কালারের ব্যাগ নিয়ে।  সিনেমেটিক একটা সিন একেবারে, গাড়ি ছেড়ে দিলো, সাইমুন কে আরো কয়েকবার ডাকা হলো, সাইমুন শেষমেস সব বাধা উপেক্ষা করে একপ্রকার লাফিয়ে ঝাপিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো। সেইযে উঠে পড়লো লাফিয়ে এখনো নামেনি, আমাদের বন্ধুত্বের গাড়িতে এখনো আছে সে সময়ের সবাই।

amarjiboni,jibon,jonaidamarjiboni,jibon,jonaid

শুধু নেই সময়টা, সাইমুনের সাথে আমাদের চক্রের মেয়েদের পরিচয় কোকের মাধ্যমে। একদা একদিন সাইমুন ভাই কাঠফাটা রোদে এ কি দু লিতার কোক আমাদের উপহার দিলো, হয়ে গেলো, সাইমুন ভাইয়ের মন বড়!

কোক সমেত সবার সাথে প্রথম পরিচয় নাকি লাফিয়ে মাঙ্কি জাম্প দিয়ে রাইডারে ওঠার সময় থেকে সবার সাথে পরিচয় এটা আমার সঠিক খেয়াল আসছেনা।আরেকদিনের ঘটনা আমরা সবাই কলেজের পেছনের দিকে বাংলা বিভাগের আশেপাশে যে গাছপালা ভর্তি জায়গাটা আছে সেখানে গেলাম, এডভেঞ্চারের গন্ধ নিতে। আসার সময় খেয়াল হলো, মেয়ারা সাইমুনের পেছন পেছন কি জানি বলে বলে হাটছে আর হাসছে।  এক বড় না দুই বড় সাইমুন ভাইয়ের … বড়। আমরা ছেলেরা বুঝতে পারলাম না সাইমুনের কি বড়। সে রহস্য অবধি সমাধা হয়েছে ভার্সিটি লাইফের শেষে এসে প্রায় ৪ বৎসর পরে।

 

তার গনিতে মেধা রয়েছে। তবে বোধকরি আলসেমির কারনে সেখানে হালকা মরিচা ধরেছে।   সাইমুন হচ্ছে সে ধরনের ছেলেদের অন্তর্ভূক্ত যারা সকালে ৯ টা ১০ টায় উঠ রয়ে সয়ে সকালের নাস্তা সারে। সে আলসেমির চূড়ান্ত আপনাকে দেখিয়ে ছাড়বে আবার ঘুরতে ফিরতে বা ভোজনে সে পারাদর্শি এবং  অতিব কর্মঠ। আমাদের চক্রের মধ্যে গনিতে তার মেধাই প্রখর। চিন্তা করছি তাকে এখন থেকে গণিত সাইমুন ডাকব।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ঃ সাইমুন হচ্ছেন গ্রুপের সেই ব্যাক্তি যেঁ কিনা প্রতিটি পরীক্ষায় ফেল করিব বলিয়া পাশ করিয়া যায়। এমন অবস্থা দাড়ালো যেঁ সাইমুন ভাই যখন কিনা ব্যাপক খারাপ পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসে এবং বলে, “ আজকের টাতে ডাব্বা মারবো” আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই সে পাশ করতে যাচ্ছে। আমার মধ্যে দিয়ে এও সন্দেহ হয়েছিলো, সে পড়েনা পড়েনা বলেও বোধয় বাসার এক কোনে বসে পরার কাজ সেরে নেয়। তবে দীর্ঘ ৫/৬ বছরের পরিচয়ে তার জাত চিনে গেছি।

 

 

সে পরীক্ষার আগের দিনেও মুভি দেখতে সাহস রাখে, এবং বিয়ের দাওয়াত খেতে উৎসাহ দেখায়। পরীক্ষার সময় তার যেন বিয়ের দাওয়াতের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। বিরিয়ানি তার বিশেষ পছন্দের একটি খাদ্য, যদিও তিনি এ খাদ্য কারো সহিত ভাগ করে খেতে একেবারেই ইচ্ছুক নন।

এবারের তার সম্পর্কে আমার কি মনে হয় সে নিয়ে বলি। সে এমন একজন যেঁ নিশ্চিন্ত। চিন্তা নেই বলে নয়, চিন্তা করছেনা বলে। তাকে মাঝে মাঝেই দেখি তার মধ্যে চাকরির জন্য চিন্তা নেই বলে সে চিন্তিত! তার জীবন নিয়ে অতিমাত্রার টেনশন নেই বলে সে টেনশিত।  আমি তখন ভাবি! আহ যদি সাইমুনের মত বিন্দাস হতে পারতাম। যাক সে কথা এক-একজন এক-এক রকম। একদিন সাইমুনের ঘারেও চেপে বসবে সংসারের ভূত। তার হয়ত আর একা একা আর আয়েশ বিরিয়ানি খাওয়া হবেনা।

সাইমুন ভাই এর  কি বড় বলছিলো মেয়েরা সে সময় জানতাম না। তবে সাইমুন ভাইয়ের মনে যেঁ কিঞ্চিত বা তারো বেশি মানব প্রেমীর বাস রয়েছে তা বুঝেছিলাম এক দূর্দিনে। সে বার বৃষ্টিতে প্লাবিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রান বিতরনে সাইমুন সাহায্য করেছিলো, পাশা পাশি অন্যরাও ছিলো। পরে আসছি তাদের কথায়।

সেদিনটার কথা খুব মনে পরে, আমাদের বাড়ি ছিলাম রাত্রে, আমি,মিজবাহ, সাইমুন,মাহামুদ,সাব্বির… শহরে প্রত্যাবর্তনের দিন বাসে না এসে আমরা এসেছিলাম ট্রাকের পেছনে চেপে।

সাইমুনের সাথে ,সাইমুনদের সাথে চষে বেড়িয়েছি চট্টগ্রাম, দু নং নেভাল, ডিসি হীল, সি আর বি । ড়াইডার, টেম্পো ছিলো আমাদের হাওয়াই জাহাজ! আমরা কাপ্তান।

একবার সাইমুনের গলার সমস্যা হওয়ায় ফিসফিস করে কথা বলত দেখে নাম হয়ে যাচ্ছিলো ফিসিফিস সাইমুন। তার বুকের ভেতরটায় কোথায় যেন কি সমস্যা ছিলো। বন্ধুর জন্য দুখে থেকেও মজা করতে ছাড়িনি আমরা। কে জানি জিজ্ঞেস করেছিলো,”দোস্ত ফুটা হয়ে গেসে?”।ফুটা সাইমুন নাম টা কালেরক্রমে এখন শুধুই লেদু।  

যেঁ নামেই ডাকিনা কেনো একটা সত্য স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই। চক্রের মধ্যে সবচেয়ে নির্বিশ সাইমুন। আমরা বাকিরা অনেক কিছু নিয়েই মাথা ঘামাই, সাইমুনের এত্ত কিছু নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই!

সে দাবায় গিয়েই বলে উঠবে, “তোরা কি খাবি খা, আমি বিরানি”।পাশে ঝগড়া চলবে, আমাদের তর্ক চলবে কিন্তু সাইমুনের ভোজন চলবে। আমার কেন জানি মনে হয় সাইমুন মানুষকে নিয়ে জটিল চিন্তা করতে পারে কম আর জিনিশ জটিল ভাবে নিতে চায়না সে। সে একটা জীবন চায় ঝামেলা বিহীন! কারন সে নিজেই ঝামেলা কম করে!

 

কিন্তু বন্ধু এমন জীবন তো হয়না! যেখানে আমাদের মত শনির চক্র তোমার চারিধারে বিরাজমান, চুপ্টি করে বিরিয়ানি আর ডিউ খাওয়ার চিন্তা বাদ দিতে পারো!!!

আর হ্যা, আমাদের কলেজের বিদায় বেলার অনুষ্ঠানে, আমাদের চক্রের মেয়েরা বলে দিলো, কয়েক বছর আগের সেই স্লোক রহস্য” এক বড় না দুই বড় সাইমুন ভাইয়ের…বড়”  পুরো ডিপার্ট্মেন্ট জানে, উত্তর-দক্ষিনে সবাই জানে এখন! আমি আর নাই বা বললাম্‌,… তবে হ্যা আমরা যেঁ ভেবেছিলাম স্লোকটা “এক বড় না দুই বড় সাইমুন ভাইয়ের মন বড়” এরকম টা হবে, তেমনটা কিন্তু নয়। খালিঘরে অন্য কিছুই বসবে!

একদিন সাইমুন বিরানি খাওয়া শেষ করে হয়ত নিজের মুখেই আপনাদের বলবে, তার বড়ত্বের কাহিনী। সেদিনের অপেক্ষায় বিদায় বন্ধু!

 

প্রানহীন এই শহরে বসে তোদের কথা খুব করে মনে পড়ে! যদি ধুপ করে আবার চলে যেতে পারতাম সময় ২০১২-২০১৩ তে!  আবার জমজম থেকে শুরু হত পথচলা! চষে বেড়াতাম আরো হাজার কিলোঃ পথ ভাঙ্গা গাড়িতে আড্ডা জমাতে জমাতে!

                           

“চলে আয় সখা-সখি

হাতে হাত ধরাধরি

আবার জমবে আড্ডা,

আবার ফুরোবে দিন,

খালি হাতে চলে যাবো ডিসি হিলে আড্ডা

খালি পেট- সে নিয়ে চরম  ঠাট্টা

আবার আড্ডা” 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া