চট্টগ্রাম থেকে আসার জন্যে মহানগর গোধূলীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঘোষনা শুনার জন্যে মুখিয়ে ছিলাম –
-“চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা গামি মহানগর গোধূলী ৪ নাম্বার লাইনে এসে দাড়িয়েছে”
ট্রেনে উঠে জানালার পাশে বসে পড়লাম, ইতিমধ্যে একজন ভদ্রলোক এগিয়ে আসলেন, জিজ্ঞেস করলেন , ভাই আমি বোধয় ওইদিকের সিট টা পাবো, সিট দেখেই অনলাইন এ বুকিং দিয়েছিলাম। আমি ্সিট টা ছেড়ে দিলাম, যদিও আক্ষেপ লাগছিলো, জানালার পাশের সীট টা হাত ছাড়া হয়ে গেলো দেখে।
যাত্রার প্রাথমিক দিকে ভদ্রলোকের সাথে তেমন কথা হলোনা। আজকালকার দুনিয়াটাই এমন কেউ কাউকে সহযে বিশ্বাস করতে পারেনা। ৩ টায় ট্রেন ছেড়ে দিলো, ভদ্রলোক জাকিয়ে বসলেন।
দুইজন মানুষ ৫/৬ ঘন্টার যাত্রায় কথা না বলে থাকবে সেটা স্বাভাবিক নয় মোটেই, আমি তো মোটেই পারিনা, আর একবার পাশে বসা যাত্রিরত সাথে কথা শুরু হলে শেষ নেই। ধীরে ধীরে ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলো। থাকেন চট্টগ্রামে, চাকরির নিমিত্তে। এখন ঢাকা যাচ্ছেন বৌ এর নিমিত্তে। বৌ বাপের বাড়ি, থাকে ঢাকায়। কথায় কথায় জানলাম তিনি বাবা হতে যাচ্ছেন।
বি নেগেটিভ ব্লাড খুজছিলেন ফোনে।
তাকে বললাম হয়ত এ ব্যাপারে তাকে আমি সাহায্য করতে পারি। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিচয় আরো সম্বৃদ্ধ হলো। তাঁর নাম জানালেন নাজমুল ইসলাম বি নেগেটিভ ব্লাড চেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোয় পোস্ট দিলাম, সাড়াও পেলাম। পরে সেই রক্ত কাজে এসেছিলো কিনা জানিনা।
যাত্রা তখন প্রায় শেষের দিকে। কথায় কথায় জানতে চাইলেন, আমি কোথায় যাবো ঢাকায়। আমি উত্তর দেওয়ার আগে চিন্তা করলাম, তবে কেনো জানি রাখ-ঢাক না করেই বিস্তারিত বলে ফেললাম। তিনিও বললেন এয়ারপোর্ট নেমে আমার পথেই যাবেন। প্রস্তাব দিয়ে বসলেন একসাথে যাওয়ার।
একটু চমকে গেলাম বৈকি! অপরিচিত একজন এভাবে বলে ফেললে, একটু কেমন জানি লাগারি কথা। আবার এক হিসেবে ধরতে গেলে আমিও তাঁর কাছে অপরিচিত। যুগের হাওয়া খারাপ তাই ভদ্রলোকের নিরিহ চেহারা, আর মার্জিত ব্যবহারের পরেও আমি সন্দেহের দোলায় দুলতে লাগলাম।
শেষতক সীদ্ধান্ত নিলাম, একসাথেই যাবো, দুনিয়া থেকে বিশ্বাস এভাবে উঠে যেতে পারেনা! মনের মধ্যে হাবিজাবি চিন্তা, অপরিচিত হয়ে কেনো আমাকে সাথে যেতে বললেন ভদ্রলোক । আবার মনে হলো, আমি রাজি হয়ে যাওয়াতে ভদ্রলোক কোন ঝামেলায় পড়লো কিনা ভেবে। গাড়িতে উঠার পর মনে হলো, তিনি চিন্তিত, তারো নিশ্চই এভাবে একজন অপরিচিতের সাথে যেতে কেমন কেমন লাগার কথা!
অথবা পুরোটাই আমার সন্দেহ প্রবন মনের কল্পনা শক্তী । শেষতক বিশ্বাস চলে এলো ভদ্রলোকের উপর। এটাই হয়ত ভাগ্যে ছিলো, নাহলে এক সীটে কিভাবেই বা বসা হলো, আর রক্ত খোজার উসিলায় তাঁর সাথে পরিচয় ও বা কেনো হলো। ভদ্রলোক বললেন, একসাথে যাওয়াতে ভালই লাগছে, আমারো মন্দ লাগছেনা, এভাবে অপ[অরিচিত ভ্রমন সঙ্গির সাথে ভ্রমনে মজা আছে।
তাঁর বাবা হওয়ার পথে যেনো কোন বাঁধা না আসে সে দোয়া করতে করতে ইসিবি চত্বর নামলাম। কিছুদিন পরেই ভদ্রলোক মেসেজ দিলেন , তাঁর কন্যা সন্তান হয়েছে।
অনেক দুরের কেও, পরিচিতও না, তবে তিনি বাবা হয়েছেন শুনে মন্তা খুশি হয়ে উঠলো। তাঁর সন্তান কে আমি হয়ত দেখবোনা কোন দিন, তবে তাঁর সন্তানের জন্মের সাথে আমিও জড়িয়ে গেলাম আত্মিক ভাবে ।