একটা ছেলে!
জন্ম ২০০০ সালের আশেপাশে।
তারিখটা ২৯ জুলাই।
তার পিতা মাতার ২য় সন্তান।
মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।বাবা ছোট খাটো হোমিও ডাক্তার। ছেলেটার যেখানে জন্ম সেখানে এখনো বিদ্যুৎ যায় নি। সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে চলে সেখানকার জীবন।
নৌকা করে নদী পার হয়ে ছেলেটা তার মায়ের সাথে স্কুলে যেত। প্রতিদিন মায়ের হাত ধরে সকাল ৯ টার খানিকটা আগে করে বাসা থেকে বের হয়ে স্কুলে যেত ছেলেটা। ক্লাস ৫ পাশ করার পর ছেলেটার বড় ভাই এর মত ছোট ছেলেকেও শহরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা উঠল। ক্লাস ৬ কোনো মতে যাওয়ার পর। ক্লাস ৭ পাশ করে ক্লাস ৮ এ শহরে পাঠিয়ে দিলো তার বাবা মা। একা এত বড় একটা শহরে বেচেলর জীবন।ছেলেটির বয়স তখন ১২–১৩…
একা থাকা শুরু করে মাত্র ১২ বছর বয়সে। মা বাবা ছাড়া।
প্রতিদিন যে ছেলেটা দুপুর ৩ টায় ব্যাট বল হাতে মাঠে যেত যেত বাবা মাকে ঘুমে রেখে,যে ছেলেটা প্রতিদিন খেলা শেষে রাতের ৭ টা বাজে বাসায় ডুকতো বাবার মার খেয়ে সেই ছেলেটা ২০১২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাবা মাকে ছেড়ে একেবারে চলে আসে শহরে।
৫ তারিখ বেসরকারি একটা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকে ক্লাস ৮ এ ভর্তি হয়।
এরপর থেকে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় ক্লাস। সকাল ৬ টায় উঠে রাতের অবশিষ্ট ভাত খেয়ে চলে যেত স্কুলে। স্কুল শেষে কোচিং করে বাসায় আসতে আসতে রাত ৭ টা। এসে পড়তে বসা!জীবনটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো।
জীবনের সেই সময়টা পৃথিবীর সবচেয়ে একা মানুষ ছেলেটার নিজেকে মনে হয়।ক্লাস ৮ এ ভাল রেজাল্ট এর পর ছেলেটা ক্লাস৯ এ সরকারি স্কুলে ভর্তি হল।
সরকারি স্কুলে প্রতিদিন খেলাধুলা করতো। মজাই ছিল সেসময়ের স্কুল লাইফটা। রেজাল্ট হলো এস এস সি এর। আশানুরূপ হয়নি খুব একটা। এরপর কলেজ।
এস এস সি তে থাকা অবস্থায় মানুষকে সাহায্য করতো ছেলেটা। রক্ত ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে বেশ কিছু কাজ সে করতো সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে। এখনো সে সেসব করে। এরপর কলেজ লাইফ শেষ।
ভার্সিটি লাইফ শুরু।
এর ভিতরের অনেক গল্প আছে যা মানুষের অজানা।
জানানোর চেষ্টাও কখনো করে নি ছেলেটা, জীবনের সব গল্প নাকি বলতে নেই।
আমিও সেসব গল্প লিখতে চাই না,জানাতেই চাই না।
মানুষ সুখের ভাগিদার হলেও কষ্টের ভাগিদার খুব কম মানুষ হয় কি না তাই…
আজ ২৯ জুলাই!
ছেলেটার জন্মদিন।
কোনো আমেজ নেই! কিছু নেই!
ছোট বেলায় মা কেক বানাতো নিজের হাতে। সন্ধ্যার দিকে আমাদের বাসায় যারা পড়তে আসতো সবাই মিলে আমার জন্যে কেক কাটতো। মা তার আগে কপালে সাদা চন্দনের ফোটা দিতো।এরপর ঈশ্বরকে প্রনাম করতাম এরপর বাবা মাকে প্রনাম করতাম।এরপর বাসায় যারা পড়তে আসতো সবাইকে নিয়ে কেক কাটতাম। যত বছর হত ততটা মোমবাতি জ্বালাতো মা। সেগুলো আমার ফু দিয়ে নিভাতে হত।
এখন সেসবের কিছুই হয় না।
জীবনের একটা বছর বৃদ্ধি মানে হল মৃত্যু একটা বছর ঘনিয়ে আসা!
কেনই বা এই মিথ্যা জন্মদিন পালন!
আমার জন্ম হোক যথা কর্ম হোক ভাল।
আমি জন্মে নয় কর্মে অমর হতে চাই। তাই সবাইকে পাশে চাই। 😇