একজন মৃত শুভাকাঙ্ক্ষী- “মতিয়ার নানা”

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

একজন মৃত শুভাকাঙ্ক্ষী “মতিয়ার নানা”

আমরা তিন ভাই যখন অনেক ছোট তখন আমাদের দোকানে একজন লোক নিয়মিত চা খেতে আসতো। বড়খাতার পাশের এলাকা ফকিরপাড়ার মতিয়ার রহমান। তিনি ছিলেন একজন ভুট্টা ব্যবসায়ী।তার  বয়স তখন ছিলো প্রায় পঞ্চাশের কোঠায়।আমার প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আমার আজকের লেখা মূলত তাকে নিয়ে। আমার অনেক প্রিয় ছিলেন তিনি। প্রকৃতির কঠিন নিয়মের ধারায় আজ তিনি বেঁচে নেই———————–।

মতিয়ার নানা কে নানা বলে ডাকতাম, কেননা তিনি আমাদের নানার বয়সী ছিলেন। আর তার কোন মেয়ে ছিলোনা,তাই তিনি আমার মা’কে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করতেন। স্বভাবতই আমি নানার অনেক কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। দোকানে সময় দিতাম বলে প্রতিদিন বিকালে আমি নানার দেখা পেতাম। মতিয়ার নানার তিন ছেলে রয়েছে। মামুন,মতিন আর মাহাবুব মামা। তারাও আমাদেরকে অনেক স্নেহ করতো।নানা আমাদের বাড়িতে আসলে আমাদের সাথে প্রচুর গল্প করতেন আর আমরা সেই গল্প মুগ্ধ হয়ে শুনতাম।একদিন আমি দোকানে বসে আছি, একা বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি নানা মানুষকে চা দিচ্ছেন। ঘটনাটি আজো আমার চোখে ভাসে।পাঠক, জানিনা একজন মানুষ কতটা প্রিয় হলে তার কথা লিখতে গিয়ে চোখ থেকে জল ঝরে।
যখন আমি বিয়ে করলাম তার কিছুদিন পর থেকে নানা আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসতেন।সবার সাথে জমিয়ে গল্প করতেন। আমি তার পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে শুনতাম আমাদের কথা। বিশেষ করে আমাদের দুজনের কথা সবাইকে বলতো। আমাদের দুজনের ছবি পকেটে নিয়ে সারাদিন যেখানেই যেত সেখানেই কাউকে না কাউকে দেখাতো।গতবছর নানা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেও বাড়িতে এসেছিলেন। আর মারা যাওয়ার দুইদিন আগে তার সাথে বাজারে দেখা হয়েছিলো। একটু কান্না ভাব করে বলেছিলো, সাঈদ আমি অসুস্থ ভাই। মাথায় প্রচুর ব্যথা করে। নানাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিলাম ও কিছুনা ঠিক হয়ে যাবে।নাহ, আসলে ঠিক হয়নি।তার দিন দুয়েক পর নানা মারা যান। আমি যখন তার মৃত্যু সংবাদ শুনি,তখন হতবাক হয়ে যাই। তার জানাজায় প্রচুর কেঁদেছিলাম।তার মৃত্যুর পর আমি আর তাকে শেষ দেখা দেখিনি।দেখিনি কারণ আমি খুব মর্মাহত ছিলাম।আর চাপ সহ্য করতে পারিনা। তবে কবরে দুমুঠো মাটি দিয়ে মুনাজাত করেছি।তারপর আমাদের বাড়িতে নানাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে কথা হতো। কিছুদিন আগে যখন ভাইয়ার বিয়ের দাওয়াত দিতে মতিয়ার নানার বাড়িতে গেলাম তখন হঠাৎ নানার কথা মামুন মামা বললেন। আমি আর কান্না সামলাতে পারিনি। সবার সামনে অঝোরে কেঁদে ফেললাম। আমার কান্না দেখে দেখে মামা মামীও ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিলো। পাঠক,প্রকৃতির নিয়ম বুঝি এটাই ” প্রিয় মানুষের অবর্তমানে কতটা প্রিয় তা বোঝা যায়”। আজ তিনি নেই, অথচ তার স্মৃতি আমার কাছে রয়ে গেছে ” আমার একটি প্রেসক্রিপশনে তিনি সুন্দর করে লিখেছিলেন ” রবি আর বৃষ্টি, দুজন দুজনের দৃষ্টি”। প্রেসক্রিপশন দেখে এখনো আমার চোখ ভিজে যায়।পাঠক, আর লিখতে চাচ্ছি না,কেননা আমার মন হু হু করে নিরবে কাঁদছে। আমি বুঝতে পারি মতিয়ার নানা আমার কতটা প্রিয় ছিলো। মহান আল্লাহ আমার মৃত শুভাকাঙ্ক্ষীকে জান্নাত বাসী করুন।
লেখকঃ সাঈদ আল রবি
রচনাকালঃ ১৩ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া