আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আজ আমরা আব্দুল্লাহ ইবন সুহাইল(রাঃ) সম্পর্কে জানবো।
আবদুল্লাহ এর ডাক নাম ছিলো আবু সুহাইল। তার পিতার নাম ছিলো সুহাইল এবং মাতার নাম ছিলো ফাখতা বিনতু আমির।
ইসলামের এই সাহাবা সম্পর্কে চমকপ্রদ ঘটনা জানা যায়।যখন মহানবী (সাঃ) ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তখন প্রাথমিক আবস্থায় এই সাহাবা ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু তিনি হিজরতের পর যখন মক্কায় ফিরে আসেন, তখন তার পিতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দী করে।পরে আব্দুল্লাহ তার পিতার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ইসলাম ছেড়ে দেওয়ার অভিনয় করেন। পরবর্তী কালে তিনি মুশরিকদের সাথে মিশেও যান। এর কিছুদিন পর নবী করিম (সাঃ) মক্কা ছেড়ে যাওয়ার পর মক্কা ও মদীনায় যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে আব্দুল্লাহ কে মক্কার ইসলাম বিরোধীরা ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু তিনি মদিনায় গিয়ে মুসলমানদের দলে গিয়ে যোগদান করেন।
এই ঘটনার ফলে আব্দুল্লাহর পিতা রাগে ফেটে পড়েন। ফলে বার বার তার ছেলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। আব্দুল্লাহ আর তার দল সঠিকভাবে তার পিতার দলের আক্রমণ হতে নিজেদেরকে রক্ষা করেন৷ এই যুদ্ধে আব্দুল্লাহর দল জয়লাভ করে। এবং এই যুদ্ধই বদরের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
প্রিয় পাঠক, একজন মানুষ যে তার সংকল্পে কতটা দৃঢ় থাকতে পারে, তা এই সাহাবার জীবনীতে জানা যায়। এর পর তিনি হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং বাইয়াতে রিদওয়ানেও তিনি মহানবী( সাঃ) এর পাশেই ছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়া এই সাহাবী আরো অনেক যুদ্ধে মহানবী (সাঃ) এর পাশে ছিলেন।
মক্কা বিজয়ের পর আব্দুল্লাহ তার পিতার হেফাজতের জন্য মহানবী (সাঃ) এর সাহায্য কামনা করেন। নবী করিম (সাঃ) সবাইকে নির্দেশ দিয়ে বললেন,আব্দুল্লাহর পিতা সুহাইল কে কেউ যেন হেয় চোখে না দেখে এবং কেউ যেন কটু কথা না বলে।
আব্দুল্লাহ তার পিতার নিকট উপস্থিত হলেন এবং নবী করিম সাঃ এর বলা কথা গুলো ব্যাক্ত করলেন।
আব্দুল্লাহর পিতা এ সংবাদ শুনে অত্যান্ত খুশি হলেন এবং পরবর্তীতে তিনি নবী করিম সাঃ এর কাছে হাজির হন। এবং কিছু পরে তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন। মহানবী সাঃ খুশি হয়ে তাকে একশত উট দান করেন।
খলিফা আবু বকর সিদ্দীক রাঃ তখন খলিফা, আরব উপ দ্বীপের যাকাত অস্বীকারকারী ও ভন্ড নবীদের যে বিদ্রোহ দেখা দেয়, হযরত আবদুল্লাহ রা: সেই বিদ্রোহ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ইয়ামামার প্রান্তরে ভন্ড নবী মুসাইলামার সাথে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আবদুল্লাহ শাহাদত বরণ করেন।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক আটত্রিশ বছর। তখনও আব্দুল্লাহর পিতা জীবিত ছিলেন।পরবর্তী তে আব্দুল্লাহ রাঃ পিতার সাথে খলীফা হজরত আবু বকর রাঃ দেখা করেন এবং সান্তনা দেন।
সে সময় সুহাইল অশ্রুসিক্ত হয়ে খলীফাকে বলেন”একজন শহীদ ব্যক্তি তার পরীবারের সত্তর জন ব্যাক্তিকে নিয়ে জান্নাতে শরিক হবে, আমি আশা করি আমার পুত্র আমাকে ভুলবে না।
মহানবীর সাথে যে কজন সাহাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ রাঃ অন্যতম। তার আদর্শের মুগ্ধ মুসলিম উম্মাহ।
লেখাঃ সাঈদ আল রবি।
রচনাকালঃ ৮ ই মে ২০২০।
নির্বাচিত সেরা পোস্ট ( ২৬/০৫/২০২০ )