গগণের উদারতা ও স্বর্গের শান্তির বাণী নিয়ে সময় সময় যে যে সবল মহাপুরুষ মর্ত্যের দ্বারে আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং জগতের কিঞ্চিত যথার্থ কল্যাণ সাধন দ্বারা মানুষের স্মৃতিপটে অক্ষয় পদচিহ্ন রেখে যান , শেখ সা’দী ( রঃ ) তাঁদের মধ্যে অন্যতম । সীমাহীন দারিদ্রতার মধ্যেও তিনি ধর্যের সাথে জ্ঞান অর্জন , পদব্রজে দেশ ভ্রমণ , কাব্য ও সাহিত্য রচনা এবং আধ্যাত্মিক চিন্তার মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিলেন সারাটা জীবন । ডাক ও তার প্রথার যখন সৃষ্টি হয়নি , পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত শত শত পত্র পত্রিকার অবাধ প্রচার যখন ছিল না ; লঞ্চ , বাস , ট্রেন কিংবা প্লেনে চড়ে পৃথিবী ভ্রমণ করা যখন সম্ভব ছিল না ; ধর্ম সাহিত্য ও ইতিহাসের অভিনব বার্তা যখন জনগণের নিকট পৌছবার কোন সুযােগ ছিল না , তখন শেখ সাদী ( রঃ ) নৈশ নক্ষত্রের ন্যায় আপন অনাড়ম্বর কিরণ ধারা উৎসারিত করে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে সে আলােক রশ্মি । বিতরণ করতেন ।
স্যার আউসলী এর মতে ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের ফারেস প্রদেশের অর্ন্তগত সিরাজ নগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । আয়ু ১২০ বছর । তবে তাঁর জন্ম ও মৃত্যু সাল নিয়ে মতভেদ আছে । কারাে কারাে মতে তাঁর জন্ম সাল ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দ এবং আয়ু ১০২ বছর । কিন্তু মুজাফফর উদ্দীন আতাবেক সা’দ বিন জঙ্গীর রাজত্বকালে যে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তাতে কোন দ্বিমত নেই । বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল শেখ মােসলেহ উদ্দীন । জানা যায় , ফারেসের শাসনকর্তা আতাবেক সা’দ বিন জঙ্গীর রাজত্বকালে তিনি যখন কবিতা লিখতেন তখন আপন নামের সাথে সা’দী ’ লিখতেন এবং এ নামেই তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন । সা’দীর পিতা রাজ দরবারে চাকুরী করতেন এবং তিনি ছিলেন খুব ধার্মিক । ফলে শৈশব থেকেই সা’দীর পিতা রাজ দরবারে চাকুরী করতেন এবং তিনি ছিলেন খুব ধার্মিক । ফলে শৈশব থেকেই সা’দী ধর্মীয় অনুশাসনের ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেন । কোন অসৎ সঙ্গ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি । শৈশবেই তাঁর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় অসাধারণ প্রতিভা । শিক্ষা লাভের প্রতি ছিল তাঁর অস্বাভাবিক আগ্রহ । কিন্তু শৈশবেই পিতা মৃত্যু বরণ করায় তিনি হয়ে পড়েন নিতান্ত ইয়াতীম ও অসহায় । পিতার আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না । সরকারী চাকুরী করে পিতা যে সামান্য বেতন পেতেন তা দিয়েই খুব কষ্ট করে তাঁকে সংসার চালাতে হত । কিন্তু পিতার মৃত্যুতে সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা এবং তাঁর শিক্ষা লাভের উপর আসে মারাত্মক আঘাত । কিন্তু এ অসহায়ত্ব ও দারিদ্রের মধ্যেও তিনি ধৈৰ্য্য হারাননি । শেখ সা’দী ( রঃ ) এর জীবনকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় । প্রথম ৩০ বছর শিক্ষা লাভ , দ্বিতীয় ৩০ বছর দেশ ভ্রমণ , তৃতীয় ৩০ বছর গ্রন্থ রচনা এবং চতুর্থ ৩০ বছর আধ্যাত্মিক চিন্তা ও সাধনা ।
রেফারেন্স: মাইকেল এইচ হার্টের the 💯 অবলম্বনে।