জীবন যুদ্ধে জয়ী সিডর সরকার ও তাঁর পরিবারের বেঁচে থাকার গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
জীবন যুদ্ধে জয়ী, সিডর সরকার

জীবন যুদ্ধে জয়ী সিডর সরকার ও তাঁর পরিবারের বেঁচে থাকার গল্পঃ  আজ থেকে ১১ বছর আগে বাংলাদেশে আঘাত হানে এক ঘূর্ণি দানব । হাজারো জীবন এক নিমিশে শেষ হয়ে যায় ।  সেই ধ্বংস পাহাড় টপকে আসা জীবন যুদ্ধে জয়ী এক শিশুর ও তাঁর পরিবারের গল্প বলব আজ। 

তখন কৈশোরে পা রেখেছি মাত্র ।  রক্তে সবসময় নেশা লেগে থাকে রোমাঞ্চের। প্রায় ভাবতাম একবার একটা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রাত যদি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কাটাতে পারতাম !   হয়ত এমন ভাবতে ভাবতেই ২০০৭ সালের নভেম্বরের রাতে চোখে ঘুম নেমে এসেছিলো। জীবন যুদ্ধে জয়ী সিডরের জন্ম সে রাতের শেষে ভোরের আলোতে! 

 

টিভির খবরে কয়েকদিন ধরেই ঝড়ের পূর্বাভাস ছিলো ।  কিন্তু সে রাতেই যে  মরণ আঘাত হানবে সিডর এভাবে নির্দয় ভাবে , কে জানত!  হয়ত অনুমিত ছিলো কিন্তু এত ক্ষয়ক্ষতির কথা হয়তবা কেউ চিন্তাও করেন নি সে সময় ।  ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানলো ।  দেশের উপকূলীয় ১১ টি জেলায় আঘাত হানল এবং সব কিছু দুমড়েমুচরে দিলো। আমরা যারা নিরাপদে ছিলাম, সারাক্ষন উন্মুখ হয়ে টিভিতে আর রেডিওতে খবর দেখছিলাম ।   ধ্বংসলীলার খবর পাচ্ছিলাম শুধুই ।  কত মানূষ মারা গেলো, কত ক্ষয়ক্ষতি হলো ।  কত পরিবার, কত প্রাণ ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল আক্রোশে পরে ঠুনকো স্বপ্নের মত ভেঙ্গে গেলো । সেসব খবরে কান আর মন দুটোই ভারি হয়ে উঠছিলো। 

 

এসব ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেই খবর পেলাম  বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা গ্রামে ,সেন্ট মেরিস গীর্জা সংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া শত মানুষের ভিড়ে অন্ধকারে মাঝে আলোর প্রদীপ নিয়ে এক শিশুর জন্ম হয়েছে।  খবরটা পেতেই  কেন জানিনা মনের ভেতরটায় খুব ভালো লাগলো! প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলার মাঝে জন্ম হলো প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদের! 

সাথী সরকার ও জর্জি সরকারের ঘরে এলো জীবন যুদ্ধে জয়ী এক সন্তান।  নতুন দিনের আগমনের মত আগমন ঘটে যে সন্তানের তাঁর নাম রাখা হয় সিডর। জীবন এর  জন্মের উপলক্ষকে মনে রাখার জন্য মোক্ষম নাম বটে!  

 

জীবন যুদ্ধে জয়ী সিডর সরকার।  গত ১৫ নভেম্বর সেই সিডরের বয়স ১১ পেরিয়েছে ।  সিডর পা রেখেছে ১২ তে ।  শিশু সিডর আর শিশু নেই!

সাড়ে তিনহাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ৫৫ হাজার মানুষ আহত হয় আর ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রায় ৮৬ লাখ মানুষ।সব ভূলে মানুষ আবার মাথা তুলে দাড়াবার সাহস দেখায়। কারন মানুষ সৃষ্টির সেরা।উপকূলের অনেকেই সে ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। পারেনি  জীবন যুদ্ধে জয়ী সিডরের পরিবারো। তবু মানুষ দিন বদলের স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে আগামীর ।  সিডরদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভালো না। ছোট জমির উপর ছোট ঘর। বাবা মাছ ধরেন আর মা ঢাকার গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। সিডর বর্তমানে দাকোপের হরিণহাটা গ্রামে  মিশনারি বোর্ডিং স্কুলে আছে।

অর্থাভাবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব হয়না ।  জীবন যুদ্ধে জয়ী সিডর হয়ত একদিন আরেকটি নতুন জীবনের গল্প লিখবে । হয়ত  জন্ম দিবে আরেকটি নতুন উপাখ্যানের, সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।   

 

সূত্রঃ jugantor

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া