বাংলাদেশে অথবা পৃথিবীর যেকোন দেশেই সুযোগের অভাব হয়ত নেই কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বা নিজ কষ্টে সুযোগ বানিয়ে সিঁড়ির বেশ কয়েকধাপ উপরে উঠতে পারে হাতে গোনা কিছু মানুষ। এমন একজন মানুষের হাত ধরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য মোবাইল আর্থিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের বিকাশ হয়েছে যার জন্মলগ্ন আর বাংলাদেশের জন্মলগ্ন খুবি কাছাকাছি সময়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক ২২ দিন আগে তাঁর জন্ম হয় ।জন্ম যার যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাঁর জীবনটাও কম যুদ্ধের , কম সংগ্রামের ছিলোনা। পরিবারের দশ ভাইবোনের একজন এবং সবচেয়ে ছোটজন।
তাঁর বাবা ছিলেন আইনজীবী, ছিলেন ৬ দফা আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মি। আমরা আজ যার কথা বলছি , যার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিকাশের বিকশিত হওয়া- তাঁর পরিচয় এখন সর্বজনবিদিত। তাঁর মতে আইডিয়া অনেক কিছুই আবার কিছুই নয়।হয়তবা তাঁর মতে এটা সাফল্যের অর্জনের চেষ্টায় ১ শতাংশ কাজ মাত্র । কারন শুধু আইডিয়া দিয়েই আপনি সফল হতে পারেন না। আইডিয়াকে কার্যক্ষেত্রে প্রমান করার নামি সফলতা।
যুদ্ধচলাকালীন সময়ে বাবার হাত ধরে পরিবারসহ চলে যান নড়াইলের নিজ গ্রামে। স্বাধীনতার পরে ফিরে আসেন যশোরে। যদিও ততদিনে সহায়-সম্পদ লুটেরার হাতে! এটা ছিলো সংগ্রামের একটা ধাপ মাত্র। ১৯৭২ সালে বাবার দূর্ঘটনায় মৃত্যুর পর শুরু হয় আসল সংগ্রাম। একা মা, দশ ছেলে-মেয়ের ভার তুলে নেন নিজের কাঁধে।
এতক্ষন বলছিলাম কামাল কাদীরের কথা। কামাল কাদীরের উত্থান হয়ত এখান থেকেই শুরু। মাধ্যমিকের পর বৃত্তি নিয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্র। চিত্রকলার পাশাপাশি অর্থনীতিও ঝালিয়ে নিয়েছেন সেখানেই। পরবর্তিতে দেশে ফিরে আসেন। ইচ্ছে ছিলো হয়তবা ভিন্ন কিছু করার। খুলে বসলেন অ্যানিমেশন স্টুডিও যদিও বানিজ্যিক সফলতার মুখ দেখেনি, তবে অভিজ্ঞতটা হয়ত নিতান্ত মন্দ হয়নি।
এরপর আবার সেই যুক্ররাষ্ট্র। সেখান থেকে মাস্টার্স শেষ করে দেশে ফিরলেন ২০০৫ সালে। এর পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন সমান তেজে। এর ফল সরূপ আমাদের সামনে রয়েছে “বিকাশ“। একটি আর্থিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১১ সালের ২১ জুলাই। এখন সাল ২০১৮ ।মাত্র সাত বছরে বিকাশের উত্থান এর গল্পটা চমকপ্রদ। এর মাঝে অবশ্য সেলবাজার (cellbazaar) নামে অনলাইন ভিত্তিক বেচাকেনার মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেলবাজারে(cellbazaar) অভিজ্ঞতায় বুঝলেন যদিও প্লাটফর্ম অনলাইন তথাপি লেনদেন অনেক ক্ষেত্রেই নগদ টাকায় হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনেও আছে বাড়তি খরচ! বা ঝামেলা। তিনি তাঁর পরবর্তি চিন্তা করলেন সাধারণদের নিয়ে। যাদের গড় লেনদেন হাজার দুয়েক টাকা তাঁরা অনেকেই ব্যাংকের ঝামেলায় যায়না, বা ব্যাংক তাদের পোশায় না। এমতাবস্থায় কামাল কাদীর চিন্তা করলেন একটি পদ্ধতি যেখানে একজন কম উপার্জনের লোক কিভাবে সহজে লেনেদেন করতে পারবে ,যে পদ্ধটি শুধু সহজ-ই নয় নিরাপদও হবে। সেখান থেকে শুরু !
অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি অবশ্য মাঠে নেমে পড়েন নি। আফ্রিকায় সেসময় চলছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। সেখানে গিয়ে কামাল কাদীর আরো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করলেন। বিভিন্ন দোকানের পাশে বসে লেন্দেন প্রক্রিয়া দেখলেন।
সাল ২০০৯ এর দিকে বড়ভাই ও অন্য দুজন কে নিয়ে গড়েছিলেন “মানি ও মোশন” নামে একটি কোম্পানী। এর পর তো ২০১১ তে শুরু হল বিকাশের বিকশিত হওয়ার গল্প! যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১১ সালের ২১ জুলাই ।
জন্ম লগ্নে পাওয়া বিকাশ নামটার রয়েছে পেছনের গল্প। ক্যাশ ও টাকা শব্দগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব পরিভাষা হয়ায় দেওয়া গেলনা সেসব নাম। কামাল কাদীর এবং অন্যরা এমন একটি নাম খুজছিলেন যেটা ইতিবাচক, মানুষ সহজে গ্রহন করবে,মনে রাখবে। সেখান থেকেই আজকের “বিকাশ” যার অর্থ বিকশিত হওয়া।
বিকাশের জন্ম হলো। ধীরে ধীরে বিকাশ বিকশিত হলো বা একটি স্বপ্ন বিকশিত হলো!