একটি কান্না একটি আনন্দ
একটি সুস্থ শিশুর জন্ম একটি পরিবারের খুশির মুহুর্ত বয়ে আনে।১৭ই জানুয়ারি ২০১৯ এ আমি একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জনক হয়েছি।আমি আর আমার সহধর্মিণী (ফেসবুকঃ Rsp Bristy) আড়াই বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম। বাচ্চার নামও রাখা হয়েছে “ সিদরাতুল রাওনাফ সিনহা“। সিনহা আসার খবর যখন পেয়েছিলাম তখন খুশির পাশাপাশি খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কেননা টিউশানি করে যা পাই তাতে তো পকেট খরচই শেষ হয়। তাছাড়া পরিবারের নতুন অতিথিকে কিভাবে বরণ করবো তাও চিন্তায় ছিলো।সবাই বলতো ছেলে হবে। কেননা বাচ্চার ধরণ চরণ দেখে বয়স্করা এটাই অনুমান করেছিলো। কিন্তু আমি আবার হাত দেখায় পটু।ছয় মাসের মাথায় মিষ্টি বউয়ের হাতখানি দেখে বললাম নতুন অতিথি তো মেয়ে হিসেবে আসবে। তা শুনে বউয়ের খুশি ধরেনা। আমরা সবাই চাইতাম প্রথম সন্তান মেয়ে হোক। এদিকে যত দিন যাচ্ছে ততই আমাদের সবার দুশ্চিন্তা বেড়েই যাচ্ছে। আমি অক্টোবরের দিকে একটু বুদ্ধি খাটালাম। প্রত্যেক মাসে টাকা জমানো শুরু করলাম। আল্লাহ জানে কি কষ্ট করে আজ একশো কাল পঞ্চাশ এভাবে কত কষ্ট করে টাকা জমিয়েছিলাম। যেটা জমিয়েছিলাম তা কম হলেও ভেবেছিলাম বিন্দু বিন্দু জলই একদিন আমাকে সাগর বানিয়ে দেবে। তা হয়েছিলোও বটে।বাড়িতে মা বউকে দেখতো তার কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা। আমি মন খারাপ না করে বউয়ের উৎসাহ দেখে খুশিই হয়েছিলাম, কেননা তার সুস্থ থাকাটা জরুরী ছিলো। সে খেতে চাইতো না। জোর করে খাইয়েছি, রাগারাগি করেছি,তবুও খেতে চাইতো না।চেকাপ করাতে গিয়ে নার্সরা বকা দিতো, বাচ্চার বাড়ন্ত কম।
এদিকে ডিসেম্বর এ এসে আমার টাকা জমানো বন্ধ হয়ে গেলো। টিউশানি নাই, কাজ নাই কাম নাই সাড়াদিন শুয়ে শুয়ে টেনশন করি আর বৃষ্টিকে উৎসাহ দেই, বলি কিচ্ছু হবেনা। আল্লাহ আমাদের কোন বিপদ দেবে না। সবাই যখন বলতো যে ছেলে হবে,আমি দৌড়ে এসে বউয়ের হাত দেখতাম আর বলতাম “নাহ মেয়েই তো হবে”। জানুয়ারি এলো স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বাচ্চা ডেলিভারি ডেট দিলো ২১ তারিখে। এদিকে টিউশানি শুরু করেছি প্রায় দশদিন হলো। যা জমিয়েছিলাম তার বেশির ভাগই খরচ করে ফেলেছি বসে বসে থেকে। জানুয়ারির ১৬ তারিখে এক ছাত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠান থেকে আসতে রাত হয়ে গিয়েছিলো। তাই এসেই গভীর ঘুমে চলে গিয়েছি,এদিকে বউ সারারাত জেগে ছিলো তার নাকি হালকা পেট ব্যাথা করছে।ভাবলাম ও কিছু না,ডেট তো দেরী আছে। কিন্তু সকালে আমার মাকে জানাতেই মা বললো স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেতে হবে। ৯ টার দিকে মা আমার মামার অটোতে বউকে নিয়ে গেলো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।কিছুক্ষণ পর আমি মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম সেখানে। গিয়েই টেনশনে কেঁদে দিলাম নিরবে! টেনশন করলে আমার প্রচুর সমস্যা হয়। চাপ নিতে পারিনা,কেননা এখনো আমি ডাক্তারের পরামর্শে চলছি। এর কিছুক্ষণ পর ১৭ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় পৃথিবীর আলো দেখলো সিনহা।
আমি সৌভাগ্যবান, কেননা মহান আল্লাহ আমাদের কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান দিলেন। হাদিসে আছে, মহান আল্লাহ বেশি খুশি হলে কন্যা সন্তান দান করেন। আমি খুশি,আমার অর্ধাঙ্গিনী খুশি। সাথে আমার পরিবার অনেক অনেক খুশি,কেননা আমাদের বাড়িতে কন্যা সন্তান ছিলোনা। এখন আমাদের সবার কাজ এই নবাগত পিচ্চির পিছনে সারাদিন পড়ে থাকা। পাঠক,শেষ করার আগে সবার কাছে একটি জিনিস চাওয়ার আছে।আমাদের নবাগত পিচ্চির জন্য সবাই দোয়া করবেন। সে যেন ইসলামিক নিয়ম কানুনের মধ্যে সুস্থ সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। মহান আল্লাহ আমাদের সকল আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করুন।
লেখকঃ সাঈদ আল রবি
রচনাকালঃ১৮ই জানুয়ারি ২০১৯।