স্টেশনে এ বসে থাকার সময় একটা লোক আসলো। লোক টার নাম :- মোহাম্মাদ হৃদয় । সে পড়তো ঢাকায় একটা স্কুলে । স্কুলের নাম টা সে আমাকে বলেছিল । ঠিক আমার মনে পড়ছেনা । সে ওই স্কুলে প্রথম শ্রেণী থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়লো । ওই স্কুলে ওর অনেক বন্ধুও জুটলো। ওর একটাই সমস্যা ছিলো । ওর বন্ধু গুলা ছিলো অনেক বড় বড় ফ্যামেলির ছেলে । কিন্তুু ও ছিল খুবি গরিব ফ্যামেলি ছেলে । ওর বাবা রিক্সা চালাতো । এভাবেই ওর স্কুলের পড়া লেখার খরচ জোগাড় করত তাঁর বাবা। ওর বন্ধুরা সব সময় ওকে নাস্তা করাইতো । ওর কাছে খুব লজ্জা লাগতো । সে একদিন ওর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা চাইলো তার বাবা টাকা দেয় নাই। তারপরও ও স্কুলে সব সময় যেত । কিছু দিন পর ও দেখতে পেলো ওর বন্ধুরা সবাই মোবাইল নিয়ে আসে , ও দেখতো বন্ধুরা বলতো তুই ও একটা নিয়ে নে। এর পরের দিন ওর আব্বুর কাছে ও একটা মোবাইলে চাইলো। সে তাঁর বাবার কাছে মোবাইল চেয়েও পেলোনা । এই সব লজ্জা সয্য করতে না পেরে ও পড়ালেখা ছেড়ে দিলো, একদিন হঠাৎ করে সে ফ্যামিলির কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো আর ও বাসায় যায়নায়।
এইবার আসলো তার ব্যচেলর জীবন । সে বাসা থেকে বাহির হয়ে গেলো! সে কি করে খাবে! কি করে চলবে?
এবার একটা সুয়েটার ফেক্টরিতে চাকরি করলো ৪ মাস। ওরে বেতন দিতো মাএ ২০০০ টাকা । সে এই টাকা গুলো দিয়ে চলা ফেরা করতো। সে হঠ্যাৎ করে ওই চাকরিটা ছেড়ে দিলো তারপর চাকরি ধরলো গার্মেন্টস এ । সেখানে অনেকদিন যাবত চাকরি করলো । সেখানে ওই গার্মেন্টস এর একটা মেয়েকে বিয়ে করলো। কয়েক মাস যাবত তার সংসার চললো । কয়েক মাস পর মেয়েটা তাকে ছেড়ে চলে গেল। সে মেয়েটাকে খুব ভালোবাসতো। তারপর সে গার্মেন্টস এর চাকরি টাও ছেড়ে দিলো। সে এইবার পাগল এর মতো হয়ে গেল তার কোন স্থান নাই থাকার মতো, সে কোন চাকরি করেনা। এখন ট্রেনে করে ঢাকা যায় , চট্রগ্রাম যায় এমন করে মানুষ দের কাছ থেকে ভিক্ষা করে দুপুরের খাবার টা খায় ।, সে আবার অনেক দিন গোসল করেনাই আমি ওকে বললাম আপনি গোলস করে নেন আমি সব কিছু দিবো আপনাকে যা যা লাগবে। সে বললো নাহ আমি গোসল করবোনা আমি হাত পা ধোব । আমি বললাম আচ্ছাহ আমি সাবান নিয়ে আসি আপনি বসেন । নিয়ে আসলাস আসার পর সে সব কিছু ধূয়ে নিলো । তারপর দোকানে নিয়ে তাকে নাস্তা করালাম, তার পর ওনি এইবার আমারে বললো ভাই আপনার মোবাইল টা কি একটু দেখতে পারি, আমি আমার মোবাইল টা দিলাম ওনাকে । ওনি অনেক টিপা টিপির পর আমাকে আবার দিয়ে দিলেন, তারপর আমারে বলে একটা গান বাজান মোবাইলে । একটা গান বাজিয়ে শুনাইলাম ওনারে । তারপর হঠ্যাৎ করে ট্রেন আসলো সে বললো আমি চলে যাবো। আমি বললাম কই যাবেন ওনি বলে চট্টগ্রাম যাবো। কি করবেন জিজ্ঞেস করাতে ওনি বললো কাজ পাইলে কাজ করবো এই বলে চলে যায় ।
তারপর ওনাকে আমি ডাকলাম আমার পকেট এ ছিলো ৬০ টাকা। ৬০ থেকে আমি ওনাকে ৫০ টাকা দিয়ে দিলাম। বললাম ভাই আপনি আপনার মায়ের বুকে ফিরে যাবেন কিন্তু। ওনি বললো হ্যা ভাই! ওনি চলে যাওয়ার পর আমি অনেকক্ষণ কান্না করলাম ওর জিবন কাহিনী নিয়ে ভেবে। , আমার এখনো চোখের উপর ভাসছে তার কথা গুলো। তার কথা গুলো এখনো আমার কানে বাজে। এই হলো রিদয় এর সত্যি এবং বাস্তব জীবনী ।
আশা করি হৃদয় ফিরে যাবে তাঁর মায়ের বুকে। বাংলার হাজারো হৃদয় ঘরে ফিরবে নাড়ীর টানে, মায়ের টানে, ফিরে যাবে মায়ের বুকে ।
লেখকঃ MI RONEY