আজ লিখবো এক দেশের কথা যে দেশের মাতা বলা হয় নদীকে আর জলেই যার সড়ে সর্বনাশ, এর জন্যে নদী নয় দেশের মানুষ, দেশের প্রশাসনই দায়ি ।মানুষের দোষ আছে তবে জনগন তাদের ভার প্রশাসনের উপর দিয়েছে ।প্রশাসন চাইলেই এই অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব, আমার বিশ্বাস সেটা হবে। তাই শক্ত হাতে প্রশাসন সন্ত্রাস দমনের পাশপাশি পানির ত্রাস ও হ্রাস করবে এটাই আশা।
ছবি গুলো দিয়ে সাহায্য করেছে বন্ধু সাইমুন,সেও জলে-নিমগ্ন দের একজন।
উপরের ছবিতে -একটা ছেলে কাধে বস্তা নিয়ে পানি ঠেলে ঠেলে হেটে যাচ্ছে। এখন আপনি বলতে পারেন এ তো স্বাভাবিক ,নদীমাতৃক দেশ বলে কথা । তাই বলেই কি তার এই ক্ষুদে সন্তানদের এঁটো ,ময়লা , বিষাক্ত পানি ঘাটতে হবে? নদীর জলে ভাসতে হবে? কোথায় নগরীর বড় বড় খাল, কোথায় সিস্টেম? চট্টগ্রামের মানুষ এখন পানি কে জীবনের একটা অংশ হিসেবে নিয়েছে, এক মিনিটের বৃষ্টি হবে আর হাটু পানি হবেনা এও কি হয় নাকি? পানির অপর নাম জীবন,তাই হয়ত কর্তৃপক্ষ এই পানি নিষ্কাশনের কোন উপায় খুজছেন না।
উপরের এই ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ভেসে যাচ্ছে জীবনের স্রোতে জীবন । এত পানি , এত সুবিধা, সবচেয়ে কাংখিত জিনিসটাই চট্টগ্রাম বিনা মূল্যে পেয়েছেন। দীর্ঘ বছর গুলোতে দেখেছি চট্টগ্রামের জায়গায় জায়গায় এই হাল। চট্টগ্রামে এখন বোধয় নৌকো বাইবার সময় হয়ে এলো। প্রশাসনের সাহসী ও সৎ পদক্ষেপ ই পারে চট্টগ্রামেই এই দূরবস্থা দূর করতে। কিন্তু একটা প্রশ্ন মনে জাগে! আর কত দেরি পাঞ্জেরী? আর কত জীবন জলে ভেসে গেলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসবে , এর উত্তর জানতে অপেক্ষায় থাকবে চট্টগ্রাম বাসী, তারা অবশ্যই নাম নয় জীবনের মানের পরিবর্তন চাইবে!
চট্টগ্রামবাসী থেমে নেই। তারা সব কিছু মেনে নিয়েছে ।দাতে দাত চেপে তারা জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। হয়ত প্রতিবাদের ভাষাই তাঁদের নেই। তবু তারা হয়ত এখনো আশায় আছে প্রশাসন তাঁদের এই কষ্টের একটা বিহিত করবে, আমরা সবাই আশায় আছি। একদিন হয়ত চট্টগ্রামে এই বৃষ্টি ভালোবাসার পরশ নিয়েই নামবে, চাপা ভয় নিয়ে আসবেনা।
থেমে নেই জীবন। দেশের জায়গায় জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। এর শেষ কোথায় কেও জানেনা। পিচঢালা অনেক পথে হয়ত অনেকের এই দৃশ্য দেখতে হয়না। কিন্তু একবার জনগনের, জন-জীবনের সাথে যারা মিশেছে তারাই জানে কি যে কষ্ট । রিকশাওয়ালার দুঃখ , বৃষ্টিতে কষ্ট বাড়ে , ভাড়া বাড়েনা, ২০ টাকার ভাড়া টানতে দাত চেপে তাঁদের যেন সত্যিকারের নদী পাড়ি দিতে হয়। তবুও আমরা বলি আমরা ভালো আছি, এটাকে যদি বেঁচে থাকা বলে, তবে আমরা বেঁচেই আছি। পানি কখন নাকের উপরে উঠবে সেটাই এখন ভয়, হয়ত পথে পথে তখন, ভেলা,নৌকো, আর বোট চলবে।
দেখে নিশ্চই মনে হচ্ছে সিলেটের জাফ্লঙ্গে লোকটা দাঁড়িয়ে। নাহ, এখন চট্টগ্রামের প্রতিটি পথ এক একটি নদী, অনেক-ঘর পানির স্রোতের সাক্ষী। লোকটা মাঝ সড়কে দাঁড়িয়ে আছে, পিচ ঢালা চিরচেনা পথ তিন দিন ধরেই পানির নিচে, এত সস্তায় জাফ্লং ভ্রমন আর হয় না।
চট্টগ্রামের মানুষ এখন আর মাছের অভাবে নেই। প্রতিটি রাস্তা, পথ-জনপদ পরিনত হয়েছে নদী আর খালে। দেখুন কি সুন্দর বাড়ির পাশে রাস্তার মাঝে জাল দিয়ে তারা আনন্দ করছে, এত সু্যোগ আর কি হবে? ঘরে ঘরে এখন মাছ, কারন প্রতিটা ঘরের ই মাছের হ্যাচারিতে পরিনত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এত দুঃখেও তারা তাঁদের স্বাভাবিক হাসি-খুশি জীবন বাদ দিতে চায়না। নদীর গতিপথের মত তাঁদের জীবন বদলে যায়। অথবা মাঝ সড়কের পানিতে তাঁদের মাছ ধরতে দেখে বাহ! ঘরের কাছেই নদী বেশ ভালো তো! এই হাসি মুখের পেছনে যদি আসল জীবন জানতে চান, একটা দিন তাঁদের সাথে কাটান, একটা রাত পানির ভয়ে জেগে থাকুন তবেই বুঝবেন! সোনার পালংকে থেকে আর যাই হোক,দেশ ও দশের কষ্ট কেও বোঝেনা!
এত হাসি মুখ আর মাছ ধরার পেছনে লুকিয়ে আছে না-বলা কথা , চাপা ক্ষো্ভ । এই কি আমাদের উন্নয়ন, এই কি আমাদের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম! এভাবে উন্নতি হতে থাকলে একদিন কি আমরা তলিয়ে যাবো? নাকি কেও আসবে আমাদের এই জলে নিমগ্ন,তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতিকে চরে পৌছে দিতে?সবাই আশায় আছি একদিন বদলে যাবে দেশ ! বদলে যাবে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার কষ্ট । আমাদের আশা করতেই হবে! আমরা আশা করি !আশা না থাকলে এত কষ্টে মানুষ গুলো হাসে কেমনে?
জীবন মিস্ত্রির বাড়ি, বাদামতল, খাজারোড.
১৩/০৬/২০১৮,চট্টগ্রাম ।
ছবি সংগ্রহে : সাইমুন( Md Shymoon )