মীর জুমলার মৃত্যু

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

মীর জুমলা সিমালুগড় অবরোধ করেন ১৬৬২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মারাত্মক হাতাহাতি লড়াইয়ের পর অহমীয়রা দুর্গ পরিত্যাগ করে পালিয়ে যায় ।মীর জুমলা ১৬৬২ সালের ১৭ মার্চ বীরদর্পে অহমের রাজধানী গড়গাঁয়ে প্রবেশ করেন এ বিস্ময়কর বিজয় লাভের পর । তিনি শুধুমাত্র আসামের রাজধানী গড়গা দখল করেছিলেন।তিনি সে দেশের রাজাকে বন্দি করতে পারেন নি বা গোটা রাজ্য দখলে আনতে পারেন নি । মীর জুমলা গড়গাঁ পর্যন্ত গিয়ে তাঁর যাত্রা রহিত করেন। বর্ষাকালে মোগল রা কয়েকটি উচু ভুমিতে আটকা পড়ে । আর এই সুযোগে অহমীয়রা মোগলদের নৈশ প্রহরে হয়রানি করত। অহমীয়রা পূর্বদিকে তাদের হারানো ভূখণ্ড বিনা কষ্টে, অনায়াসে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। মোগলদের অধিকারে ছিল কেবলমাত্র গড়গাঁও এবং মথুরাপুর।

মোগলরা মথুরাপুর শিবির পরিত্যাগ করে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি না থাকাযর কারনে । বন্ধ হয়ে যায় রসদের সরবরাহ । খাদ্যের তীব্র ঘাটতি দেখা দেয় শিবিরে। সৈন্যরা ঘোড়া জবাই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে। অনেক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে মোগলরা পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে । মীর জুমলা সক্ষম হয়েছিলন লাখনৌ ও ঢাকায় মোতায়েন রাজকীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে । মথুরাপুরে মোগল শিবিরে মহামারী দেখা দেয় খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি। মহামারির কারনে মীর জুমলা তার দুই-তৃতীয়াংশ সৈন্য হারান।মোগল সৈন্যবাহিনী তাদের আক্রমণাত্মক অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয় একমাত্র মীর জুমলার দৃঢ় নেতৃত্বের কারনে।

অবশেষে বৃষ্টির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসে । পানি নেমে যায়। যোগাযোগ সহজতর হয়ে যায়। মীর জুমলার সৈন্যদের পুনরায় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় লাখনোতে মোগল নৌবহরের সঙ্গে। ইতি ঘটে মোগল শিবিরে দুর্দশার। দেবালগাঁয়ে মোতায়েন নৌবহরের সঙ্গে মিলিত হয় মীর জুমলার সৈন্যরা । আবার পাহাড়ে পালিয়ে যান রাজা জয়দববাজ সিং। সৈন্যরা অগ্রযাত্রা করতে অস্বীকৃতি জানায় , ডিসেম্বরে মীর জুমলা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে। এরি মধ্যে আসামের রাজা অস্থির হয়ে পড়েন পুনরায় শান্তি চুক্তি করার জন্য। শেষ পর্যন্ত ১৬৬৩ সালের জানুয়ারিতে ঘিলাজহরিঘাটে একটি চুক্তি হয়।

মীর জুমলা সৈন্য প্রত্যাহার করার সঙ্গে সঙ্গে দখলীকৃত অহমীয় ভূখণ্ড মোগলদের হাতছাড়া হয়ে যায় চুক্তির শর্ত অনুকূলে হওয়ার পরেও। মোগলদের সঙ্গে অহমীয়দের বিরোধ বাধে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ নিয়ে। ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করেন রাজা জয়দববাজ । অহমীয়রা ক্ষতিপূরণ স্থগিত করে দেয় মীর জুমলা আসাম থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা মাত্র । নীতিগতভাবে যে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিপক্ষে ছিলেন জয়দববাজের উত্তরসূরি চক্রধাবাজ সিং

মীর জুমলা যখন আসাম থেকে ফিরে আসছিলেন সে সময় ১৬৬৩ সালের ৩০ মার্চ খিজিরপুরের অদূরে নৌকায় থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।তাকে কবর দেয়া হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যে । এটি অবস্থিত গারো পাহাড়ের কাছে একটি উঁচু টিলায় । দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর কবর সংরক্ষন করা হয়।

তাঁর শাসন কাল (১৬৬০ – ১৬৬৩) । ১৭ শতকে ভারতের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের অন্যতম মীরজুমলা ছিলেন নিজের চেষ্টায় সামান্য অবস্থা থেকে অতি উচ্চপদে আসীন হওয়া একজন । তিনি ছিলেন নম্র,ভদ্র,কিন্তু নিজের দায়িত্বের প্রতি সচেতন । জীবন শুরু করেছিলেন একজন সামান্য কেরানী হিসেবে। সেই তিনি নিজ গুনে মোগল সাম্রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি ও সুবাহদার হয়েছিলেন। একজন দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালক এবং দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন মীর জুমলা । তাঁর ন্যায়পরায়নতা ও দক্ষ নেতৃত্বের জন্যে তিনি বাংলার চির স্মরণীয় ।

 

রেফারেন্স  www.wikipedia.org

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন