দিনটা ছিলো শুক্রবার। পরিচিত এক ভদ্রলোকের স্ত্রীর জন্যে রক্তের খুব প্রয়োজন বিধায় তিনি হন্যে হয়ে রক্ত খুজছিলেন। আমার সাথে পরিচয় ছিলো বিধায় আমাকেও বলল। বললাম আমি খুব করে চেষ্টা করবো রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়ার জন্যে।
কয়েকজন কে কল করলাম। রক্ত পাইনা। অদিকে ভদ্রলোক আবার আমাকে কল দিচ্ছিলো বার বার। ০+ রক্তের খোজে চষে ফেললাম মোবাইলের সব কন্ট্যাক্ট নাম্বার । কারো সময় হয়নাই, তো কেও আনরিচেবল। শেষ পর্যন্ত ভাতিজা হিমেলের কথা মনে আসা মাত্র তাকে কল দিলাম। হিমেল এক কথায় রাজি হয়ে গেলো । অপেক্ষা করছিলাম হিমেল আসার জন্যে। সে সন্ধ্যার পরে আসা মাত্র বেরিয়ে পরলাম হংস্পাড়া মেডিকেলে যাওয়ার নিমিত্তে।
সেখানে পৌছে দেখি ভদ্রলোক আমাদের অপেক্ষা করছে। তাঁর সাথে উপরে গেলাম মেডিকেলে। ভাতিজার আবার ক্রিকেট এর খুব শখ।সে প্র্যাক্টিস করে এসেছিলো বিধায় দেখতে তাকে বেশ ক্লান্তই লাগছিলো। ডাক্তারের বুঝি তাকে দেখে সন্দেহ হলো,রক্ত দিয়ে সে নিজেই না পরে যায়। তবু হিমেল বদ্ধ পরিকর ছিলো রক্ত দিতে। ডাক্তার রা বলল আগে তাকে কিছু খেয়ে নিতে। অগত্যা তাঁর কিছু খেতেই হলো।
এবার আসলো রক্ত দেওয়ার ক্ষন। ভাতিজা কে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম এত পরিশ্রম করে এসেও রক্ত দেওয়ার জন্যে, অদিকে ডাক্তারের টেনশনের কারনে নিজেরো তাকে নিয়ে টেনশন হচ্ছিলো। যাক ভালোয় ভালোয় রক্ত দান শেষ হলো। ভাতিজা শুয়ে আছে, আমিও বসে আছি। দুজনের বেশ খুশি খুশি লাগছে। আমার চেয়ে ভাতিজার খুশি বোধয় বেশি। রক্ত দানের পর আসলে আনন্দটাই অন্যরকম। চিন্তা করছিলা, সবাই যদি নিজ থেকে এভাবে রক্তদান করে, রক্তের অভাবে রোগীর মৃত্যু কমে যাবে বেশ।
খুশি খুশি ভাব টা আচানক উবে গেলো। একটা চিৎকার শুনলাম। দৌড়ে গেলাম বাইরে। একজন মা মেঝেতে শুয়ে তরপাচ্ছেন, আর একজন মাঝ বয়সি লোক বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। খবর নিয়ে জানলাম একটু আগে একজন ডেলিভারি পেশেন্ট এডমিট হয়েছিলোয়া। সবি ঠিক ছিলো, কিন্তু হঠাৎ ডেলিভারির রোগী মারা গিয়েছিলো। যারা এসেছিল নতুন এক মানব সন্তানের জন্ম দেখতে। তারা দেখে গেলো এক হঠাৎ মৃত্যুর হাহাকার।
ডাক্তারদের অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাদছে। একজন মহিলা ডাক্তারের চোখের পানি বাঁধ মানছেনা। তিনি পরে ডাক্তার আগে একজন মানুষ। উপস্থিত কেও যেনো ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। এই যে মহিলাটা একটু আগে তাঁর অনাগত সন্তান কে নিয়ে আসলো, উদরের যন্ত্রনা তবে মুখে নতুনের জন্মের আশা নিয়ে। তারা দুজনি মারা গেলো। এক সন্তান হারালো মা, মা হারালো সন্তান ।
আমার আর ভাতিজার সেদিন বোধকরি মিশ্র অনুভূতি হয়েছিলো, রক্ত দানের আনন্দ ক্ষনস্থায়ী জীবনের কাছে ম্রিয়মান হয়ে গেলো। এক অজানা, অনুভূতিদের নিয়ে আমি আর হিমেল ফিরতি পথে চললাম। জীবন খুবি ক্ষণস্থায়ী তা হাড়ে হাড়ে তের পাচ্ছিলাম, এই যে বেঁচে আছি এটাই তো বড় পাওয়া।