মুনির হাসান : বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সেবক ও  উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
মুনির_হাসান_munir_hasan

মুনির  হাসান : বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সেবক ও  উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তা

মুনির হাসান বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের  (BdOSN)  সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং  বর্তমানে দৈনিক প্রথম আলোর  যুব কর্মসূচী সমন্বয়কের কাজে নিয়েজিত আছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে তরুণ ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহ জাগানিয়া প্লাটফর্ম চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব এর   সাড়া জাগানো পথচলার  পেছনে রয়েছে মুনির হাসানের অনন্য অবদান।  

মুনির  হাসানের জন্ম চট্টগ্রামে।  এখানেই সেন্টমেরিজ , মুসলিম হাইস্কুল , মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি  -এ তার শিক্ষাজীবনের একাংশ কাটে। তার শিক্ষাজীবনের পরবর্তী অংশের সাথে জুড়ে  আছে চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অবদানের জন্য তাকে তার বন্ধুদের অনেকেই মেথ মুনির  নামেই সম্বোধন করেন যদিও তিনি গণিতের উপর স্নাতক করেননি। বরঞ্চ তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ইলেক্ট্রিকাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং  বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

মুনির  হাসানের বাবা মরহুম এএফএম এজহারুল হক ছিলেন একজন কলেজ শিক্ষক , যিনি পরবর্তী জীবনে  ব্যাংকিং পেশায় নিয়েজিত ছিলেন।   মা জেবুন্নেসা হাসেম গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা।  পিতা-মাতা উভয়ের কাছ থেকেই তিনি উৎসাহ পেয়েছিলেন নিজের মত করে নিজেকে ও তার জীবনকে নিয়ে ভাবার, এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী  জীবন বেছে নেওয়ার। নানা এবং দাদা উভয়ের কাছেই মুনির হাসান উৎসাহ পেয়েছিলেন জীবনকে নিজের মত করে সুন্দর ভাবে গড়ার।

তার নানা ড আবুল  হাসেম পূর্ব বাংলার  মুসলিমদের মধ্যে প্রথম মেডিকেল গ্রাজুয়েট যিনি তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ  করেছেন চট্টগ্রামের মানুষদের সার্বিক সহায়তা করার জন্য। অপরদিকে তার দাদা মৌলভী আহমেদ চৌধুরী তার জীবন উৎসর্গ করেছেন  সকলের জন্য শিক্ষার প্রসারের নিমিত্তে।

কর্মজীবনে দৈনিক সংবাদের সাপ্তাহিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফিচার পাতায় লেখালেখির সুবাদে সাহচর্য পেয়েছেন  বিজ্ঞানকর্মী ও লেখক আ মু জহুরুল হক, আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন প্রমুখের । নিজেও ছিলেন বিজ্ঞান মনস্ক, সাথে তাদেরও ছিল অনুপ্রেরণা।  পরবর্তীতে মুনির হাসান হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সেবক। ভোরের কাগজ এবং দৈনিক প্রথম আলোর বিজ্ঞান বিষয়ক সাপ্তাহিক ফিচার পাতার সম্পাদনার কাজে  একাগ্রচিত্তে কাজ করেছেন তিনি।

গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিষ্ঠার আগে  (SPSB) ‘ সাইন্স অর্গানাইজেশনের যাত্রা শুরুর অংশীদার ছিলেন। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। মুনির  হাসান , অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ,অধ্যাপক জাফর ইকবাল , অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর চেষ্টায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি গঠিত  হয়। বর্তমানে মুনির হাসান এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক।গণিতের পাশাপাশি তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞান ও প্রোগ্রামিং প্রসারের জন্যে।  গণিত ও বিজ্ঞানের উপির লিখিত তার কিছু জনপ্রিয় বই রয়েছে।

উদ্যোক্তাদের জন্য  প্লাটফর্ম “চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব” তার হাত ধরে তরুণ হৃদয়ে  বিশেষভাবে বলতে গেলে নব উদ্যোক্তাদের  দিচ্ছে উৎসাহ ।

চাকরি খুঁজবনা চাকরি দেব সম্পর্কে  মুনির  হাসানের নিজস্ব ব্লগ থেকে সংগৃহিত লেখা , সবার সুবিধার্থে দেওয়া হলো– 

“চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব”-কে যখন আমরা ফেসবুক থেকে বের করলাম, তখন থেকে আমরা ভেবেছি উদ্যোক্তাদের জন্য কী কী করা যায়? শুরুর দিকে আমাদের ধারণার মধ্যে ছিল সেমিনার, কর্মশালা। এর পরই আমরা ভাবলাম একটা হাট করলে কেমন হয়। সে সময় এবং এখনও অনেক পণ্য মেলা হয়। বাণিজ্য মেলা থেকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। একটা সাধারণ চরিত্রও দাড়িয়েছে। একটি মুলত মেলা প্রধান যেখানে বিকি-কিনি হবে। আর একটি কনফারেন্স প্রধান যেখানে ভারি কথাবার্তার পাশাপাশি বেচাকেনা হলেও হতে পারে।

আমি অবশ্য ভাবছিলাম ভিন্ন কিছু। এমন একটা গ্যাদারিং যেখানে উদ্যোক্তা ইকো সিস্টেমের লোকজন থাকবে এবং তাদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং হবে। কাজে, এক রকমের পণ্য বা সেবা থাকবে না। বিটুসি’র পাশাপাশি বিটুবি’ও থাকবে। আর এই কারনেই আমরা হাট শব্দটাকে বেঁছে নিয়েছি।  উদ্যোক্তা হাট। গ্রামীণ হাটের মতো যেখানে কেবল লোকে বেচাকেনা করতে যায় না, গল্প করতে যায়, আড্ডা দিতে যায়, কোন ইনফরমেশনের জন্য যায়। তার মানে এটির মুল লক্ষ্য কিন্তু বেঁচা কেনা নয়। আর এরকম ভাবে আমরা ঢাকায় ৫টি এবং চট্টগ্রামে একটা আযোজন করে ফেলেছি। এবারের আয়োজনটি তাই ঢাকায় ৬ষ্ঠ বারের মতো। আগামী ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি হবে “আইপে ফাল্গুনী উদ্যোক্তা হাট ২০১৯”। আজ ছিল তার সংবাদ সম্মেলন। সম্মেলনে কিছু গৎ বলতে হয়। সেটা আমি বলেছি। শওকত ভাই, আবুল খায়ের চৌধুরী ও খাদা মরিয়ম তাদের কথা বলেছেন। এছাড়া কথা বলেছেন কয়েকজন উদ্যোক্তাও। আর তার মধ্যেই আমি খুঁজে পেলাম হাটের স্বার্থকতা।

উদ্যোক্তা হাট
উদ্যোক্তা হাট

অনুষ্ঠানে কথা বললেন চামড়াজাত পন্যের উদ্যোগ সাবাব লেদারের ব্যবস্থাপনা পার্টনার শোয়াইব হোসাইন। তাদের প্রতিষ্ঠানটি আমাদের মিরপুরের হাটে অংশ নিয়েছে। সে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানালেন –  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করলেও দেশে কেউ তেমন আমাদের চিনতো না। কিন্তু মিরপুর “উদ্যোক্তা হাটে”র পর থেকে আমাদের লোকাল ব্র্যান্ডিং-এর প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এখন আমরা অনেক লোকাল সাপ্লাই-এর কাজ পাচ্ছি।” তাঁর বক্তব্য হলো – হাটটাকে কেবল বেচাকেনার জন্য না ভেবে এ থেকে সব ধরণের সুবিধা একজন উদ্যোক্তার গ্রহণ করা উচিৎ।

আমিও সেটা বলি। এই হাটে থাকবে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের লোকজন। আইপিডিসি উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সাহায্য করে। এর মধ্যে একটা হরো ফ্যাকটরিং। এটি হলো ওনাদের মেম্বার প্রতিষ্ঠানে যদি কেউ কোন মালামাল সরবরাহ করে তখন সে বিলের বিপরীতে তার উণ দেন এবং বিল আদায়ে সাহায্য করেন। এ টাকার পরিশান এমনকী ৫ কোটি টাকাও হতে পারে। এই মেলাতে আইপিডিসির যারা থাকবেন তারা কিন্তু নিজেদের চাহিদা, সুযোগ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করবেন। এবং সেটি ইনফরমাল ভাবে। কাজে এটি একটি বড় সুযোগ।

অন্যদিকে,  আইপে বাংলাদেশের হেড অব বিজনেজ আবুল খায়ের চৌধুরী জানান হাটের উদ্যোক্তাদের জন্য আইপের পক্ষ থেকে নতুন একাউন্ট তৈরি করার সুবিধার পাশাপাশি আই পে’র মাধ্যমে সম্পাদিত সকল লেনদেন ফী মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ ক্রেতারা যদি আইপে’র মাধ্যমে লেনদেন করেন তাহলে বিক্রেতাদের কোন কমিশন দিতে হবে না! আইপের বর্তমানে ৭ লক্ষ নিবন্ধিত ও ৭৫ হাজার একটিভ ইউজার আছে। কাজে উদ্যোক্তারা আইপের মাধ্যমে তার পণ্য বা সেবার খবর পৌছানোর জন্য কাজ করতে পারেন

বাংলাদেশে  বিজ্ঞানের প্রচার-প্রসার ও নব দিনের নব উদ্যোক্তাদের উৎসাহের্ অন্যতম উৎস তিনি। বিজ্ঞানমনস্কদের পক্ষথেকে, নব উদ্যোক্তাদের পক্ষথেকে ,এবং ভবিষ্যতের সুন্দর বাংলাদেশের পক্ষথেকে তার কর্মপ্রয়াস কে জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।   

 

তথ্যসূত্র:

   munirhasan.com

 futurestartup.com

authors.com.bd

    

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া