ড মোহাম্মদ কায়কোবাদের জীবন চরিত ( সম্পূর্ন)

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

পর্ব  ১ম

 

ঠুক ঠুক, দরজায় টোকা পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। চোখ না খুলেই পাশের মোবাইল এর তালাশ নিলাম।  চোখ খুলে চক্ষু চড়ক গাছ! একি ১০ বেজে ৩০ যে! ঘুমের তল্পি-তল্পা গুটিয়ে সকালের কাজ সেরে বসে পড়লাম খটখটানি যন্ত্রটা নিয়ে । আমি আমার ল্যাপটপের নাম দিয়েছি খটখটানি যন্ত্র। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, কাগজে কলমের খোঁচায় লিখতাম। এখন একটি যন্ত্রের উপর ভরসা করতে হয়।  

 

আধুনিক জগৎ মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। এর বড় প্রমান প্রতিটি মানুষ নিজেই!  এখন মানুষ বাস করে ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে এমন কি ব্যবসা ও করে সেখানে, হিসাবো সেখানেই। এখন মানুষের মেধার পরিচয় কাগজে নয় ইন্টারনেটে, কাব্য প্রতিভা আর বিজ্ঞানীরা এখন ইউটিউব এ ঝঙ্কার তুলেন।

 

আপনারা বলতেই পারেন এত কিছুর সাথে মোহাম্মদ কায়কোবাদের জীবনের সম্পর্কটা কোথায়! আছে আছে আলবৎ আছে।  তিনিও লিখে গেছেন অসংখ্য গ্রন্থ, নেটে নয় কাগজের পাতায়। সে সময়ের মানুষ গুলোর কথা বলতে গেলেই, লিখতে গেলেই মনে পড়ে যায় তাদের জীবন ব্যাবস্থার কথা। আহ! কি সুন্দর ই না ছিলো।

 

হয়ত কোন এক কাক ডাকা ভোরে তিনিও লিখতে বসেছিলেন, যন্ত্রে নয় সাদা বা হালকা হলুদ কোন কাগজে বা ঘাম ছোটানো কোন টাইপ রাইটারে। যেহেতু তিনি একজন  বিজ্ঞানী বা শিক্ষক এর পাশাপাশি কলামিস্ট, এবং লেখক ছিলেন সেহেতু এটা ধরেই নেওয়া যায় তিনি নিয়মিত কলমের ঘাম ছুটিয়ে দিতেন। অথবা আদি যুগের টাইপ রাইটারের শরীরে  সাহিত্যের,শিক্ষার ঝঙ্কার তুলতেন।

 

বলছিলাম কলামিস্ট,শিক্ষক,বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড মোহাম্মদ কায়কোবাদের কথা । লেখাটা যখন শুরু করছি তখন সাকিব কে জিজ্ঞেস করলাম অধ্যাপক ড মোহাম্মদ কায়কোবাদকে চিনে নাকি।

 

সাকিব কিছুক্ষন মাথা চুলকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কবি কায়কোবাদ নাকি”?

 

আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে তিনি কি কবিও ছেলেন নাকি! দারস্থ হলাম আমার সব-জান্তা না হলেও অনেক জান্তা বন্ধু অনীকের।

 

সে রাশভারী গলায় প্রথমে আমাকে ধিক্কার জানালো “ তুই ড মোহাম্মদ কাইকোবাদকে চিনিসনা?   ১৯৫৪ সালের পয়লা মে তে তার জন্ম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে ছিলেন, লেখার হাত ও ছিলো বেশ”।  বন্ধু অনীকের কথায় কায়কোবাদ সম্পর্কে জানার জন্য উৎসাহ পেলাম বেশ।

 

অনীক থেকে জেনেছিলাম আরো অনেক কিছুই। আমি তাকে এটা বললাম না যে” আমি কাতকোবাদ সম্পর্কে মোটামুটি জানি”। জানি বললে সে আমাকে জানাতে উৎসাহ পেতনা। শেষমেস তার কাছে জানা-অজানা মিলিয়ে বেশ ভালোই তথ্য পেলাম।

 

জানলাম কায়কোবাদের জন্ম মানিকগঞ্জে।  এখন বলতে পারেন মানিকগঞ্জ কোথায়? মানিকগঞ্জ ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।  তার গর্বিত বাবা মরহুম আনিছউদ্দিন আহমেদ ও রত্ন গর্ভা মা মাতা সাহেরা খাতুন । বাংলার সাহিত্যাকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জন্ম দিয়েছেন আরো নক্ষত্রের।  তার কর্ম জীবনে শিক্ষার দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি হাজারের মাঝে। পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেছে তার দুই পুত্র-সন্তান।

 

লেখাটার এই পর্যায়ে আমি থমকে আছি। এ ভদ্রলোকের সম্পর্কে আজকে যা জানলাম, যা এখনো লিখিনি, এতদিন কেন জানিনি। বিদেশের কোথায় কি হচ্ছে খবর রাখি! অথচ! আফসোস আমারি দেশের অনেকেই আমাদেরি গর্বদের চেনেনা। আমি নিজেই তো চিনতাম খাপছাড়া ভাবে। ধন্যবাদ বন্ধু অনীক কে!  

 

পর্বঃ২

 

সকালের রৌদ্রস্নাত দিন শেষে ঝুম বৃষ্টির গান চলছে। এর মধ্যেই মন-মগজে বেজে চলল মোহাম্মদ কায়কোবাদের কথা। তার জীবনের কিছু কথা বলেছিলাম  ১ম পর্বে। এখন সরাসরি চলে যাবো তার শিক্ষাজীবনে। আসলে চলে যাওয়া সম্ভব না , কিছু স্মৃতিচারণ করব আরকি! চলে যাওয়া সম্ভব হলে অবশ্যই ৪৮ বছর পিছিয়ে গিয়ে মানিকগঞ্জের সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে কায়কোবাদের সাথে দেখা করে আসতাম। সেখান থেকেই তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন কিনা!

 

মুক্তিযুদ্ধের ঠিক এক বছরের মাথায় ১৯৭২ সালে দেবেন্দ্র কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে পাশ করেন উচ্চমাধ্যমিক।  আচ্ছা মাথার মধ্যে একটা কথা ঘুড়ির মত ঘুরছে, ড মোহাম্মদ কায়কোবাদ তখন কি জানতেন তিনি একাধারে এত্ত কিছু হবেন? নাকি মজার ছলে পড়েছেন, আর হয়ে গেছেন এরকম!

 

কারন এখন এই যুগে দেখি মানুষ এর লক্ষ্যের শেষ নেই, সবাই লক্ষের দিকে এতই তীব্র বেগে ছুটে যে আশেপাশে কটা-কাটা পড়লো কেউ খেয়াল রাখেনা। আমি বিশ্বাস করি কায়কোবাদরা এমন ছিলেন না।  মাঝে মাঝেই কেপিয়াই, গোল, আর স্টাটিস্টিক্স এর এই যুগে আমার মোহাম্মদ কায়কোবাদ দের আমলে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়। আমাদের কায়কোবাদ ১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলীয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।  পড়ালেখা করতে মানুষ সুদূর চীনে যায়, আর আমাদের কায়কোবাদ চষে বেড়িয়েছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন,থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলীয়া।

 

পেশা জীবনে  তার পদক্ষেপ অভিনন্দনের দাবিদার বটে! পদক্ষেপ বলছি এ কারনেই এ যুগের টাকা-কড়ির যুগে টাকাটাই প্রাধান্য পায়, যেখানে টাকা বেশি সে চাকরীর দাম বেশি। তিনি শুধু উপার্জনের পথ ই বেছে নেন নি, বেছে নিয়েছেন শিক্ষার পথ। যেন একটা উল্কা পুড়তে পুড়তে অন্যদের ধুপ করে জবালিয়ে যাচ্ছে।

 

১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে যোগ দেন। ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফিরে সফটয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর এখন দেশের গর্ভে জন্ম নিয়ে বিদেশ উন্নয়ন চলে!  অনেকেই একবার বিদেশের মায়ায় পড়লে আর ফিরে আসতে পারেন না! কায়কোবাদের মত অনেকেই ফিরে আসেন। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হইন ১৯৯৪ সালে এবং অধ্যাপক পদে ১৯৯৭ সালে।  এসব কিছুই যেভাবে খুট খুট করে লিখলাম এমন হুট করেই হয়নি নিশ্চই! এর পেছনে ছিলো মোহাম্মদ কায়কোবাদের একনিষ্ঠ সাধনা,জ্ঞানের সাধনা!

 

এভাবে লিখে গেলে একজন কায়কোবাদের জীবন চরিত  লেখা যায়না স্পষ্ট ভাবে। ভালো হত যদি তার সাথে দু-দন্ড দাঁড়িয়ে কথা বলা যেত।  যেটার সম্ভাবনা খুবি ক্ষীন। যদিও তাকে নিয়ে লিখছি শুনার পরেই দুলাভাই মিজানুর রহমান জাভেদ জানালেন তার সাথে যোগাযোগের ই-মাধ্যম রয়েছে। যদিও আমি আলসে প্রকৃতির হয়ায় সে ই-মাধ্যম এখনো খোঁজা হয়ে উঠেনি। দুলাভাই যদি খানিকটা স্বেচ্ছায় ব্যাবস্থা করে দেন তবে অন্য কথা ।

 

ড.মোহাম্মদ কায়কবাদের কাজের শেষ নেই। এ সম্পর্কে হয়ত আমার থেকে ভালো আমার বন্ধু অনীক বলতে পারবে। তার থেকে কিছুটা জ্ঞান ধার করে লিখলে মন্দ হয়না। হয়ত ভালো মন্দের মিশেলে কিছু একটা দাঁড়িয়ে যাবে বেশ!

 

৩য় পর্ব

 

অনীকের সাথে কথা হয়নি। তিনি সংযোগের বাইরে। নতুন যা কিছু তথ্য তার জন্য আমার শরণাপন্ন হতে হয়েছে ইন্দ্র-জালের কাছে। তার কাছে যা তথ্য পেয়েছি তা দিয়ে বেশ লেখা যায়। তবে সে লেখা শুধুই তথ্য কেন্দ্রিক হবে বলে আমার সুদৃড় বিশ্বাস ।

 

আজকের সকাল টা ছিলো মেঘলা। কিছুক্ষন বৃষ্টির পরেই বৃষ্টি ধরে এসেছে। সকাল থেকেই কারেন্ট ছিলোনা, আর মোঃকায়কোবাদ কে নিয়ে আমার লেখাটা অনাদরে পড়ে আছে। হ্যারিকেনের আলোয় গল্পের ঝুড়ি খুলে বসা এখন সুদূর কোন অতিতের কল্পনা।  তথ্য নিয়ে টানা-পোড়নের শেষে যা জানলাম তাই নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি আজ।

 

“সামান্যে কি তার মর্ম জানা যায়” এটা সম্ভবত কোন কবিতা বা গানের চরন বা তার একাংশ, ঠিক মনে আসছেনা, তবে কায়কোবাদ সম্পর্কে আমার প্রথম চিন্তা আজ এটাই। হাজার লেখার ভিড়ে কায়কোবাদের কাজের যে ফর্দ আমি দাড় করাচ্ছি তার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। কায়কোবাদ রা কোথাও জীবনী লেখানোর জন্য কাজ করে যান নি, বরং তাকে নিয়ে দুটো কথা গাইতে পেরে আমি ধন্য।

 

যদি ড কায়কোবাদের কাজের ফিরিস্তি শুরু করি, সেটা টেকনাফ শেষ করে তেতুলিয়া যেতে পারে। সে ক্ষমতা আমার নেই। তাই কিছু কথাই না হয় বলি। এসিএম আইসিপিসি  বিশ্ব ফাইনালে বুয়েট দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের তিনি বিশ্বমানের মেধার প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে উৎসাহ দেন। জাফর ইকবালের সাথে তার যৌথ চেষ্টায় বাংলাদেশে গনীত অলিম্পিয়াড়ের পথ সুগম হয়।  শুধু পথ তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, যে পথের দিশা দিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রিদের সে পথের শেষটায় পৌছুবার পথটাও বাতলে দিয়েছেন তিনি। পথের শুরু থাকলেও শেষটা পর্যন্ত পৌছানো কষ্টকর এটা নিশ্চই তিনি জানতেন ।

 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ,চট্টগ্রাম স্টকএক্সচেঞ্জ সহ, অনেক নামী প্রতিষ্ঠানে তিনি কম্পিউটারাইজেশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। লিখেছেন”মেধাবী মানুষের গল্প” “অলিম্পিয়ার্ড সমগ্র” “Computer Programming Contest and Bangladesh,” আরো অনেক বই।  তার অনেক বই এর নাম শুনেই আমার দাঁতকপাটি লেগে যাচ্ছে, তার কাছে এসব নিশ্চই নেহায়েত নিতান্ত ব্যাপার ছিলো!

 

“প্রথম আলো, ভোরের কাগজ, The Daily Star, The Observer, The Independent  ,এছাড়াও অন্যান্য লেখার জগতে লিখেছে ২০০ এর মত প্রবন্ধ। এই জ্ঞানী মানুষ কে নিয়ে লিখতে ভালই লাগছে ।হয়ত লিখতে লিখতে একটা গোটা উপন্যাস দার করানো যায়।

 

তবে সত্য বলতে কি চাইলেই বোধয় সবকিছু  সম্ভব নয়, অথবা আমি সে ভাবে চাইছিনা। ভালো থাকুক কায়কোবাদ, বাংলার বুকে আরো কায়কোবাদের জন্ম হোক, এত্ত এত্ত যে লিখতে গেলেই যেন কনফিউজ হতে হয়! কোন কায়কোবাদের কথা লিখবো!

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া