এশিয়া কাপ ফাইনাল হেরেও হারেনি বাংলাদেশ

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

একেবারে ধরি ধরি করেও শেষ পর্যন্ত ধরতে পারেনি বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। মাত্র দুই রানের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেছে ক্রিকেটের এশিয়া কাপ। বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছে, জিতেছে পাকিস্তান। জিততে না পারলেও সাকিব-মুশফিক ও তামিমরা শুধু পাকিস্তানিদেরই ঘামিয়ে ছাড়েনি, ক্রিকেট দুনিয়াকেও কাঁপিয়ে তুলেছে। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মতো সাবেক ও বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। এ কোনো সাধারণ সাফল্য ছিল না। শচীন টেন্ডুলকরের শততম সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বকেও ম্লান করে দিয়েছে মুশফিকরা। শ্রীলঙ্কার জয়বর্ধনরা তো ঘামে নেয়েই উঠেছিল। সব মিলিয়েই এশিয়া কাপের একাদশ আসরে বাংলাদেশ ‘টক অব দ্য ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডে’ পরিণত হয়েছিল। টাইগারদের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকেছে ক্রিকেট দুনিয়া। ফাইনালেও তারা যথেষ্টই দেখিয়েছে। শাহাদতের শেষ ওভারে যদি ১৯টি রান না করতে পারত তাহলে পাকিস্তানকে ২২০-এর ঘরে আটকে পড়তে হতো। ওই রান করা টাইগারদের জন্য কোনো সমস্যাই হতো না। কিন্তু শেষ ওভারের ১৯-ই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও তামিমের সূচনা ছিল দেখার মতো। কিন্তু তাল মেলাতে পারেনি নাজিম। ৫২ বলে অতি শম্ভুকগতিতে মাত্র ১৬ রান করার মধ্য দিয়ে দলকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিল এই ওপেনার। তামিমের বিদায়ও এসেছিল বড় ধাক্কা হিসেবে। ৬৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সাকিব অবশ্য সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু বল আর রানের হিসেবে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ২১ রানের ব্যবধান থেকেছে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত। সাকিব সম্ভবত ধৈর্য রাখতে পারেনি। মুশফিকের মনেও ছিল দ্রত রান করার স্বাভাবিক তাড়া। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দু’জনই দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে। এই শূন্যতা পূরণ করতে পারত মাশরাফি। কিন্তু সেও হঠাত্ একটি ভুল মার দিয়ে বসেছিল। ক্যাচ সোজা চলে গেছে পাকিস্তানি ফিল্ডারের হাতে। এরই মাশুল গুনতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মাত্তরই দুই রানে হেরে গেছে মুশফিকরা।

ফাইনালে বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার কারণ নিয়ে এখন জোর আলোচনা চলছে। খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যালোচনা করা হলে কিছু ভুল-ত্রুটি নিশ্চয়ই ধরা পড়বে। সবকিছুর ওপরে ছিল দেশের মাটিতে ফাইনাল খেলার বিরাট মানসিক চাপ। এশিয়া কাপের ফাইনাল উপলক্ষে পুরো দেশই মেতে উঠেছিল বৃহস্পতিবার। সাধারণ দর্শকরা তো বটেই, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত মাঠে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। ওদিকে দেশজুড়ে মানুষ ভিড় জমিয়েছিল টেলিভিশনের সামনে। সবার প্রত্যাশা পূরণ করার প্রচণ্ড চাপ ছিল টাইগারদের মনে। এই চাপ কাটিয়ে ওঠা এবং সাবলীলভাবে খেলতে পারাটা অবশ্যই সহজ ছিল না। প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানিরাও জান-প্রাণ দিয়েই খেলেছে। তাছাড়া টিম হিসেবে এই সময়ে পাকিস্তান যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং পরাজিত হওয়ার আশঙ্কাও পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যি হাতছাড়া হয়ে গেছে প্রায় নাগালে এসে যাওয়া কাপটি।

আমরা অবশ্য হতাশাকে প্রাধান্যে আনার পক্ষপাতী নই। অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার বরং অর্জনের দিকগুলোকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও কৈশোর না পেরোলেও বাংলাদেশ শুধু এশিয়া কাপের ফাইনালেই ওঠেনি, ওঠার আগে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দু-দুটি পরাশক্তিকে ধরাশায়ী করেছে। এই সফলতা অবশ্যই হেলাফেলা করার মতো নয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রয়েছে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ফেলার কৃতিত্ব। পাকিস্তানের অধিনায়কসহ বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশেরই আসলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা বলেই শেষ মুহূর্তে অসফল হয়েছে টাইগাররা। একে কেউই সম্পূর্ণ অসফলতা হিসেবে বিবেচনা করেননি। অর্থাত্ যথেষ্টই দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও টাইগাররা ছিল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। মাত্র দুই রানে হেরে যাওয়াকে তাই শোচনীয় পরাজয় বলা যায় না। এতে লজ্জিত হওয়ারও কিছু নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের সাবিক আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউণ্ডারের অবস্থান অর্জন করেছে। এশিয়া কাপেও সে ম্যান অব দ্য সিরিজ হিসেবে সম্মানিত হয়েছে। এটাও নিঃসন্দেহে বিরাট প্রাপ্তি। এভাবে সব মিলিয়ে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, কাপ না পেলেও বাংলাদেশ আসলে কিছুই হারায়নি। বাংলাদেশের প্রাপ্তির পাল্লাই বরং অনেক ভারি হয়ে উঠেছে। আমরা আশা করতে চাই, এই টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তোলার এবং আরও অনেক সাকিব-মুশফিক ও তামিমকে তৈরি করার চেষ্টা নেয়া হবে। আমরা অসাধারণ সফলতা ও কৃতিত্ব অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সম্মান এনে দেয়ার জন্য টাইগারদের প্রতি প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
1
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1