একজন অদৃশ্য নারী ভাস্কর্যশিল্পীর কথা –
বাংলাদেশে ভাস্কর্য চর্চার অগ্রদূত – ভাস্কর্যশিল্পী নভেরা আহমেদ।জন্মের পর তারা চাচা তার নাম রাখেন নভেরা। নভেরা ফার্সি শব্দ। যার অর্থ নতুন জন্ম বা নবাগত। নামের সাথে মিল রেখে নভেরা যেন্ জন্ম নিলেন বাংলার ভাস্কর্য শিল্পের এক নতুন জন্মের উপলক্ষে।
নভেরা আহমেদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৯ মার্চ, চট্রগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর গ্রামে । তার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রা মে। স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় নভেরা এখানে এক পুলিশ অফিসারকে বিয়ে করেন। সে বিয়ে বেশিদিন টিকেনি।১৯৮৪ সালে বিয়ে করেন গ্রেগরি দ্য বুনস কে এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার সাথেই দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন।
এই শিল্পীর কর্ম জীবন নিয়ে নানা,বিতর্ক রয়েছ। নভেরা আহমেদ ভাস্কর্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯৫০ সালে লন্ডনে চলে যান। ১৯৫৫ সালে প্রখ্যাত ব্রিটিশ ভাস্কর্য শিল্পী Jacob Epstein এবং চেকোস্লোভাকিয়ার প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী Karel Vogel এর অধীনে সফল ভাবে কোর্স সম্পন্ন করে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ঢাকায় নির্মিত পাবলিক লাইব্রেরী যা পরে ঢাকা বিশব্বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে পরিণত হয়, সেখানে লাইব্রেরির প্রবেশদ্বারের দেওয়ালে নভেরা আহমেদ চিত্র অংকন করেন, তা আজও বিদ্যমান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিকল্পনার জন্য নভেরা আহমেদের অবদান অপরীসীম। নভেরা আহমেদ ১৯৯৪ সালে গনপ্রজাতান্ত্রি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক এর জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।
এ দেশে নারী শিল্পী নভেরা আহমেদ তার প্রতিভার মাধ্যমে নব চেতনার নব সৃষ্টিতে স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা উত্তর এ দেশে শিল্প আন্দোলনকে তরান্নিত করে ছিলেন ।দুমাস ব্যাপী এক প্রদর্শনীতে নভেরা আহমেদের নয়টি মেটাল ভাস্কর্য এবং ৪২ টি চিত্রকর্ম সংবলিত মোট ৫০ টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়ে ছিলেন। এই প্রদর্শনটির সব আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন নভেরা আহমেদের স্বামী গ্রেগরি দ্য বুনস। এই শিল্পীর হাজারো গুণের কথা নিজের কালীপুর গ্রামের বেশিরভাগ লোকই জানেনা এখনো সেভাবে। এখানে তিনি একজন অদৃশ্য নারী শিল্পী। এই গুণী শিল্পী থেকে গেছেন সাধারণ লোকচক্ষুর অগোচরে। এটা আমাদের জন্য দূর্ভাগ্যজনক।
১৯৭০ সালে ১৪ ই অক্টোবর নভেরার ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । ব্যাংককে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। এই প্রদর্শনীতে বেশীর ভাগ ভাস্কর্য ঝালাই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়,এই ভাস্কর্যগুলো ছিল অতীতের যে কোন ভাস্কর্য চেয়ে স্বতন্ত্র ও মনমুগদ্ধর। এই অদৃশ্য নারী নভেরাই প্রকোশলী শফিকুর রহমানের স্ত্রী কুসুমের ছোট বোন। এই প্রতিভাবান নারী শিল্পীর মৃত্যু হয় ৫ মে ২০১৫।
শুনেছি তাঁর পোষা একমাত্র সোহাগের পাখিটি একই দিনে মৃত্যুবরন করে। মৃত পাখিটি সহ শিল্পী নভেরা আহমেদকে স্বামীর বাড়ি প্যারিসে সমাহিত করা হয়।