আমার শিশুকাল বা শৈশব কেটেছে গ্রাম। বলতে গেলে আমার শৈশবের একটা অংশ যদি গ্রামে কাটে তাহলে,অপর অংশ কেটেছে শহরে। আমার শৈশব এর প্রথম স্কুল ছিল গ্রামে। স্কুলটার নাম ছিল বেগম নূরনাহার প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়ালেখা খুব একটা করতাম না, অনেক ফাঁকি বাজ ছিলাম, যার জন্য বাড়ি তে স্যার রাখে আমি আর আমার বড় আপুর জন্য। আপু আবার সে সময় ক্লাস সেভেন এ ছিলেন। আপুর সাথে আমার সব সময় ঝগড়া হতো, এর বেশির ভাগ দোষ কিন্তু আপুর ছিলো, কারণ আমি সে সময় অনেক ছোট ছিলাম তেমন কিছু বুঝতাম না। একটা জিনিস বুঝতাম আমাকে বলে দিতে হবে, কিছু হলে সোজা আম্মুর কাছে। আম্মু আবার আমাকে খুব আদর করতো। কারণ আমি দুষ্টমি কম করতাম।
পরে আমাদের দুই ভাই বোন এর জন্য লজিং স্যার রাখা হয়। আর সেই দিন থেকে আমার পড়ার জীবন শুরু হলো। শিখতে শুরু করলাম অ,আ,ক,খ,১,২,1,2,A,B নতুন নতুন সব শব্দ। এ ভাবে কেটে গেলো একটি বছর। ঠিক এক বছর পর স্যার শহরে চাকরি ঠিক হলে চলে গেলেন। এর পর একটু একটু বেড়ে উঠা, যদিও পড়ালেখার ব্যাপার এ ফাঁকি বাজ ছিলাম কিন্তু অন্য দিক দিয়ে সবার প্রিয় ছিলাম। কারণ দুষ্টামি খুব কম করতাম এবং বড়দের কথা শুনতাম । তবে আমার একটা খারাপ অভ্যাস ছিলো আমি ছোট বেলা থেকে জংগলে খেলতে পছন্দ করতাম আর একটু সুযোগ পেলে বাড়ির সামনে জংগলে ঢুকে পরতাম। আমার যতটুকু মনে আছে সেই সময় আমাদের বাড়ির সামনে হলুদ বাগান ছিলো, আমি আম্মুকে এই একটা দিক দিয়ে খুব জ্বালাতাম। আমাকে সব সময় খুজে পেতো না, একদিন বাড়ির পিছনে আরেক দিন সামনে বা পাশে গিয়ে নিজের আনন্দে খেলতাম, কিন্তু সন্ধ্যা হলে আমাকে নিয়ে সবার চিন্তা সবাই আমাকে খুঁজত , কিন্তু সহজে খুঁজে পেতো না। বাড়ির এই দিক সেইদিক পুকুর ঘাট কিছুই বাদ রাখতো না, কিন্তু আমাকে বেশির ভাগ সময় আমাদের ঘাটার সেই হলুদ বাগান এর ভিতর বা মাঝখানে খুঁজে পেতেন।
আর আম্মু আমাকে নিয়ে সব সময় চিন্তা করতেন কারন একটু সুযোগ পেলেই তো আমি হাওয়া হয়ে যেতাম। এর জন্য আম্মু অনেক সময় কান্না ও করতো এবং সব সময় এই সমস্যার কারনে আমাকে অনেক মারতেন ও অনেক বকা ঝকা করতেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা, আজকে মাইর খেতাম আবার রাতে ঘুমের সাথে ভুলে যেতাম , পরের দিন গুলো ও এই ভাবে কাটতো। আমি আবার বাড়ির বাইরে তেমন যেতাম না, তবে একটা কথা খুব মনে পড়ে যখন একটু বড় হই তখন আম্মু আমাকে দুপুরে ঘুমপাড়াত কারন যাতে করে বাইরে না যাই। কিন্তু আমি ঘুম এর ভান ধরতাম আর উল্টো আম্মু কে ঘুমপাড়াই দিয়ে চলে যেতাম সামনের বাড়িতে খেলতে। আর বাড়িতে আসার পর তো মাইর একটা ও মাটিতে পড়তো না। আম্মু আবার মারে না-মারে না, মারলে আবার একদম ছাড়ে ও না। আমাকে ছাড়া আবার খেলা হতো না সেই সময় কারন আমার কাছে ব্যাট ছিলো। আর অন্যদের যেসব ব্যাট ছিলো তা গ্রামের কাঠ দিয়ে বানানো। আমার ব্যাট টা আমার মেজো ভাইয়া এনেছিল । সে সময় নাকি মেজো ভাইয়া জাপান থেকে আসছিলো যতটুকু জানি। কিন্তু সব থেকে মজার ব্যাপার আমি ভাইয়া কে চিনতাম ও না। কিন্তু আমি সেই সময় খেলাধুলা কম করতাম। সে সময় থেকে আমার সপ্ন ছিলো একজন ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু সব কিছু সবার জন্য আসে না এক সময় খুব ভালো ক্রিকেট ও খেলতাম, কিন্তু স্বপ্নই স্বপ্নই থেকে যায়।