আবদুস সালামদের জন্ম হয় স্বাধীনতার লক্ষ্যে। দেশের – দশের ,ভাষার স্বাধীনতার জন্য তাদের হৃদয়ে থাকে এক বুক ভালোবাসা , বিশ্বাস ও সাহস। গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা দমে যাবার নয়, তাদের রক্তেভেজা শার্টে আঁকা থাকে স্বাধীনতার নতুন ভোরের ছবি।
আবদুস সালামের জন্ম ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলায়।গ্রামের নাম লক্ষণপুর। সময়ের পরিক্রমায় যে গ্রাম নামাঙ্কিত হবে আবদুস সালামের নামে। আবদুস সালাম এর জন্ম ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর। পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া। তার মায়ের নাম দৌলতের নেছা। শহীদ আবদুস সালাম আর্থিক অভাবের কারনে পড়ালেখা বেশিদূর করতে পারেননি। তিনি গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করেন ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত ।
আমাদের দেশের ইতিহাস বিবেচনায় ধরলে এ দেশের বুকে বারংবার বিদ্রোহের , আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে । কিছু বিদ্রোহ, কিছু আন্দোলন শাসকের আসন নাড়িয়ে দিয়েছে।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৫২ এর ভাষা আন্দোলন , ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন । আজকে একটি আন্দোলন নিয়েই, এই আন্দোলনের এক বীর আবদুস সালাম কে নিয়েই লিখাটা লিখছি।
ভাষা শহীদদের মধ্যে অন্যতম আবদুস সালাম,আবদুল জব্বার ,আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন ;আহমদ,শফিউর রহমান । ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের একজন আবদুস সালাম। ভাষার জন্য এভাবে অকাতরে প্রাণ দিয়ে দিবে বাংলার তরুণেরা এটা কি শাসকরা ভাবতেও পেরেছিল?
আসুন ঘুরে আসি অতীতের সেই অস্থির ,ভাষার অধিকার আদায়ের সময় থেকে।
উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্টরভাষা। এমন ঘোষণার পর বাংলার আপামর জনসাধারণের মনে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠে।
এ আন্দোলন ছুয়ে যায় আবদুস সালামকেও। ৫২ এর ২১ এ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার জন্য ১৪৪ ধারা জারি থাকা অবস্থায় শুরু হয় ভাষা আদায়ের বিক্ষোভের। বিক্ষোভে অংশ নেন আবদুস সালাম সহ অনেকেই। আন্দোলনরত ছাত্রজনতার সাথে রাজপথে নেমে আসেন সালাম। আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয় সালাম,রফিক,বরকত,জব্বার সহ অনেকেই।
আহত অবস্থায় ঢাকা;মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে ভর্তি করে হয় তাকে। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯৫৩ সালের ৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তবে তার মৃত্যুর তারিখ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে ১৯৫২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সালামের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০০ সালে তাকে মরণোত্তর ২১ শে পদক দেওয়ার সময় গেজেটে তার মৃত্যর সময় ৭ এপ্রিল ১৯৫২ লেখা হয়। তখন থেকেই বিতর্কের জন্ম।
তবে মৃত্যুর তারিখ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হলেও নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে আবদুস সালামের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি।এভাবেই প্রাণবিনাশী বুলেট থেকে অবিনাশী চেতনার জন্ম হয়। যে চেতনা ছড়িয়ে পড়ে বাংলার ঘরে ঘরে, কোটি অন্তরে, সহস্র প্রাণের বিজয়োল্লাসে।
ভাষার জন্য আবদুস সালমাদের তথা ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি ।তাদের এ আত্মত্যাগ বাঙালিকে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে পরবর্তীতে বাংলার স্বধিনতা সংগ্রামে।