আজ সকালে একজন বয়স্ক চাচা আসলেন , দেখেই বুঝলাম ইনি বাংলাদেশের সেই শ্রেনীর মানুষ যাদের জন্যে এই দেশের মাথাদের কোন চিন্তা নেই,ইনি ভিক্ষুক ।
চাচার সাথে কথা হচ্ছিলো। বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন ,
“বাড়ি ভোলা”
জিজ্ঞেস করলাম “ আপনার নামটা জানতে পারি?”
“কাজি”
“কোথায় থাকেন? সন্তান আছে?”
“ছিলো , রানা প্লাজায় দুই ছেলে ,দুই মেয়ে মারা গেছে বাবা ,তখন থেকে আমার কেও নাই, সবাই ছিলো, সব ছিলো, এক দিনে সব শেষ হয়ে গেলো, এখন পথে পথে মেগে খাই,বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন”।
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না,জানি লাভ নেই, ইনি সে শ্রেনীর মানুষ যারা রানা প্লাজায় স্বজন হারায়, কিন্তু দেশ তাঁদের নিয়ে ভাবেনা, ইনি সেই শ্রেনীর মানুষ যাদের সব কিছু এই দেশের এক শ্রেনীর অর্থলোভীদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে অনেক আগেই। এদের চাওয়া পাওয়া থাকতে নেই, ঈদ থাকতে নেই, এমনকি এদের বোধয় পরিবার ও থাকতে নেই।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের সকাল এখনো অনেক কেই কাঁদায় । বোবা কান্না কাঁদে আজো স্বজন হারারা । সেদিন সকালে সাভারে আট তলা রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়ে ১১০০ এর বেশি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে ।সেদিন থমকে গিয়েছিলো পত্থিক,থমকে গিয়েছিলো দেশ, থমকে গিয়েছিলো বোধয় বিবেক। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো হাজারো পরিবারের স্বপ্ন , যার খেসারত এখনো কাজি চাচার মত ৭০ ঊর্ধ লোকদের দিতে হয়। এটা ছিলো বিশ্ব-শিল্প ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এক দূর্ঘটনা। একে কেন্দ্র করে মামলা হয়েছিলো অনেক,কিন্তু একটি ছাড়া নিষ্পত্তি হয়নি সঠিক ভাবে কোনটির ।
সেদিন চলে গিয়েছে,সেই ভোরের পর আরো হাজারো ভোরের আগমন হয়েছে । কিন্তু সেদিনের ভোর যা কেড়ে নিয়েছিলো তা আজো ফিরে পায়নি স্বজনেরা । আর কত প্রশ্নের উত্তর অজানা থাকবে দেশের মানুষের। আর কত জন কাজি এভাবে পথে পথে ঘুরবেন, রানা প্লাজার মত বড় লোকদের আবর্জনায় পরিজন হারিয়ে? আর কত ব্যথা বুকে নিয়ে নির্লজ্জের মত বলব, আমি ভালো আছি? আমরা ভালো আছি?
কাজি চাচারা হয়ত আর বিচার পাবেনা, তাকে দেখে মনে হয়না তিনি এদেশে আর বিচারের আশা রাখেন । কখন বিচার হবে? যখন কাজি চাচা প্রান ত্যাগ করবে তখন?