চিত্তানন্দে কাটুক জীবন: ভালো থাকুক তারা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
Bangladesh, Jonaid_bin_kayes, village, amar_jiboni, jibon, life

ঈদের ২য় দিনের কথা সম্ভবত, আজকাল দিন-খনের হিসেব ঠিক থাকেনা, তবে এটা ঠিক কালের দোষ নয় , ছোট বেলা থেকেই এমন । হলুদ আর মরিচ আনতে দিলে মরিচ আর আদা নিয়ে এসে আম্মুর হাতে উত্তম-মধ্যম কম খাইনি!

সে যাক যখনের কথা তখন হারিয়ে গিয়েছে , বলছিলাম সেদিনের কথা, যেদিন আকাশে নির্মল এক চাঁদ ছিলো , হালকা মেঘ ছিলো। আমি আর আরাফ হাটছিলাম, বাড়ির সামনের  বড় রাস্তা ধরে,। আগে একদিন হয়ত এ রাস্তা মাটির ছিলো, যখন গরুর  গাড়ি চালিয়ে নিতো গাড়োয়ান। এখন সময় বদলেছে, বদলেছে দিন, বদলেছে মানুষের জীবন।

 

উদ্দেশ্য ছিল চা পান করা, গ্রামে-গঞ্জে রাত আট টা নটার পর দোকান  খোলা পাওয়া -সে এক আশ্চর্য ব্যপার।  আর তখন বাজে রাত ১২ টা । একটা দোকান হয়ত বা খুজে পাবো এই আশা ছিলো, আর ছিলো ঈদের সময় । গ্রামের মানুষদের জন্যে এর চাইতে সুখের সময় আর হতে পারেনা।

 

হাটতে হাটতে চলে এলাম বহুদূর, দূরের বাতিঘরের মতই একটা-দুটো  দোকানে বাতি জ্বলতে দেখলাম। ঢুকে বসলাম । দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলাম চা আছে কিনা, জানালো আছে। বাহ বেশ! একেবারে আনন্দের সাথে আসন গেড়ে বসলাম দুজন। দোকান বলতে টিনের চালা, আর বেড়া দেওয়া, এসব দোকানের চা আলাদা একটা তৃপ্তি দেয়, যেটা দেয় না ২০/৩০ বা ৫০ টাকার চা। পরিবেশ টাই আসল কথা। 

 

আমরা দুজন চা পান করছিলাম, একজন লোক দোকানের এক কোনে বসে ছিলো। দেখেই মনে হয় তিনি এমন একজন যার চিন্তা নেই! নির্বিকার নিশ্চিন্ত। হয়ত দেখে বোঝা যায় না ,কিন্তু হাজারো ব্যাথা বুকে চেপে তিনি হয়ত বেঁচে আছেন। লোকটার সম্পর্কে না জানে খারাপ-ভালো আমি বলতে প[রিনা, সে অধিকার আমার নেই। 

 

আমরা চা-পান করছিলাম, লোকটা সেটা একবার দেখলো,চোখ ফিরিয়ে নিলো, সে চোখে আফসোস নেই, আছে নির্লিপ্ততা। হঠাৎ

কি মনে হলো, তাকে বললাম, আসেন আমাদের সাথে এক কাপ চা খান। চা যদিও পান করার জিনিশ তথাপি, গ্রামের লোকের কাছে চা-পান যে কথা চা-খান ও সে কথা, এরা ভাবের মানুষ কথার নয়।

 

লোকটা নির্লিপ্ত ভাবেই চায়ে চুমুক দিয়ে চলছে। শহুরে নেকামি করে বলছেনা , ‘থেঙ্কস’ ।

আমারো বেশ ভালই লাগছিলো, এক কাপ চায়ের জন্যে ভারি একটা থেঙ্কস এর কি দরকার। জিজ্ঞেস করলাম,

 

-এখানেই থাকেন?

-জি, এখানেই বাড়ি, ওইজে ওদিকে ।

-পরিবার সহ থাকেন? কি করেন?

-জি, জমি চাষ করি।

 

কথা বার্তায় ও আদিখ্যেতা নেই। ভালো লাগে এভাবে খোলা মেলা কথা শুনতে ,আরো অনেক কথার শেষে চলে আসার সময় হঠাৎ মনে পড়লো তাঁর নামটাই জিজ্ঞেস করা হলোনা!

 

-নাম কি আপনার?

– আমার নাম?

-হ্যা আপনার

-আমি তো হিন্দুর ছেলে

-আমি আপনাকে তো কোন ধর্মের , কার  ছেলে তো জিজ্ঞেস করেনি

তিনি হেসে বললেন

-চিত্ত দে

-বাহ সুন্দর।

 

এর পর চলে এলাম, মনে প্রশ্ন জাগে একটা মানুষ যখন কে জিজ্ঞেস করা হয় তাঁর নামকি সে কেনো আগে বলবে আমি হিন্দুর ছেলে বা মুসলিমের ছেলে।! কেন এত সংশয়। থাকুক না  গ্রামের সহজ-সরল মানুষ গুলো চিত্তানন্দে। কাটুক না জীবন চিত্তানন্দে।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া