রতন তাঁর বাসা থেকে বের হয়েছে কোন উদ্দ্যেশ্য ছাড়াই। যদিও উদ্দেশ্য ছাড়া মানুষ হাটা-হাটি করেনা,নিদেন পক্ষে ঘুরবার ইচ্ছে বা পলায়ন করবার ইচ্ছে হলেও মনে জাগতে বাধ্য। এই মূহুর্তে রতন সেটাই ভাবছে। আবার এও ভাবছে যার জীবনের উদ্দেশ্যই নেই তাঁর কিভাবে রাস্তায় হাটার জন্য আলাদা উদ্দেশ্য থাকে!
রতনের বাবার বিশাল ফ্ল্যাট্ রতন কে এক চিলতে ঘুম উপহার দিতে পারেনা। দিতে পারেনা নির্ভেজাল এক-টুকরো আনন্দ। পাজেরোর ব্যাক সীটে বসে রতনের বমি আসে, এটা হাই-ক্লাস সোসাইটির তথাকথিত ভদ্রদের সাথে মোটেই যায়না। সে ভদ্রস্ত হইবার চেষ্টা করিয়াও চিরকাল অভদ্রস্ত রহিয়ায়া গেলো টাইপ অবস্তাহ ।
চিনির গ্লাসে তাঁর পানির স্বাদ লাগেনা। ওভেনের গরম খাবারে পেট তেতে ওঠে। হাই সোসাইটির বন্ধুদের আড্ডায় তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে। রতন হাটতে হাটতে একটা বটবৃক্ষের সামনে উপস্থিত হয়। আহ ছায়া! তাঁর অন্তর জুড়িয়ে যায়। এসির বাতাস তাঁর কায়ায় যে প্রশান্তি দান করতে পারেনা, বট-তলের ছায়া তাঁর সে ক্ষতে অতি আবেগে পরশ বুলিয়ে দিলো। সুবিশাল প্রকৃতির বক্ষে রতনের বিশাল হাই এর সাথে সুনিদ্রার আগমন ঘটে। নিদ্রা দেবীর বাস তবে হাই ক্লাস ফ্ল্যাটে নয়, এই বট-তলেই সমাহিত। ভাবতে ভাবতে রতন নিদ্রা দেবীর কোলে তাঁর বহুদিনের লালিয়ত অজানা স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সূর্য মামা অস্তাচলে, আর পাখির ঝাক বাড়ির বাঁক ধরেছে। অস্তাচলের রবির সাথে রতনের সখ্যতা ছিলোনা কোন কালেই। তবে কিছু বন্ধুত্ব বুঝি আগাছার মত জন্মে বট -বৃক্ষের আকার ধারন করে। সেদিন পাখিদের সাথে সখ্যতা তাঁর হৃদয়ের কক্ষে এক গোপন প্রনয়ের আবেদন সৃষ্টি করে। প্রান ভরে শুদ্ধ বাতাস বক্ষে ধারন করে যখন রতন বাড়ির পথ ধরলো তখন সে জানে আগামী কাল উচ্চ-বৃত্তদের বাসগৃহ সে ত্যাগ করবে । সে হঠাৎ করেই যেন জীবনের উদ্দ্যেশ্য খুজে পেলো!