দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা – একজন বাঙালি অধ্যাপক এবং শিক্ষাবিদ ।সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা জন্মগ্রহন করেন ১৯৩৪ সালের ১ মে , পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় ।তার পিতার নাম মুহম্মদ আব্দুল রশীদ। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের একজন স্বল্প বেতনভুক্ত চাকরিজীবী । পরিবারে তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ২য়।
শামসুজ্জোহা তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন পশ্চিমবঙ্গে। সৈয়দ শামসুজ্জোহা ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলা স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সাফল্যের সাথে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ন হন। তিনি বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এর মধ্যেই শুরু হয়ে যায় পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। অনেকেই সে সময় পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুর্ব বঙ্গে এবং পশ্চিম বঙ্গ থেকে পুর্ববঙ্গে স্থানান্তরিত হন। সে সময় ম্মদ শামসুজ্জোহা পরিবার নিয়ে চলে আসেন পুর্ব বাংলায়। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।সেখানে রসায়ন বিভাগে শুরু হয় তাঁর স্নাতক পাঠের যাত্রা। প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনের সাথে। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স, টেকনোলজি এন্ড মেডিসিনে অধ্যয়ন করেন ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শামসুজ্জোহা পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স কারখানার সহোযগী কারখানা পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হন ১৯৫৫ সালের শেষের দিকে । তিনি সেই একই বছরে যুক্তরাজ্যের সাউথওয়েলসে রয়্যাল কারখানায় যোগদান করেন বিস্ফোরক দ্রব্যের উপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। পশ্চিম পাকিস্তানে ওয়াহ ক্যান্টনমেন্টে সহকারী পরিচালক হিসবে যোগদান করেন ১৯৫৯ সালে। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন রসায়ন পদে লেকচারার হিসেবে। এখানে বেশকিছুদিন ধরে অধ্যাপনা চলার মাঝেই পুনরায় লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে চলে যান বৃত্তি নিয়ে। ডিআইসি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে তিনি আবার ফিরে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।ব্যক্তিগত জীবনে ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা বিবাহবন্ধেন আবদ্ধ হন নিলুফার ইয়াসমিনের সাথে। ১৯৬৬ সালে তাদের ঘর আলো করে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি উন্নীত হন প্রাধ্যক্ষ পদে। এই মেধাবী ও অভিজ্ঞ অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ ১৯৬৮ সালে এক বছর মেয়াদী বৃত্তি পান নরওয়ের আসলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ছাড়েনি।