একজন খেয়ালী রাজকুমারের নোটবুক

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
vinci, yftgh, vghgv, hjng

আমাদের গল্পের রাজকুমার আনুমানিক ১৪৮২ সালে  মিলান গমন করেন ।তিনি  ১৪৮২ থেকে ১৪৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মিলানে কাজ করেছেন। আনুমানিক ১৫০০ সালে তিনি ফ্লোরেন্স ফিরে আসেন এবং সামরিক বিভাগে প্রকৌশলী পদে নিয়োগ লাভ করেন। এই সময়েই তিনি তাঁর বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা অঙ্কন করেন। জীবনের শেষ কাল তিনি ফ্রান্স এ কাটান।হ্যা বলছিলাম লিওনার্দোর কথা ।

তিনি ছিলেন ইতালীয় রেনেসাঁসের কালজয়ী চিত্রশিল্পী। তবে লিওনার্দোর শুধু  ছবি নয় আরো অনেক কিছুর প্রতি কৌতুহল ছিলো। নয়বহুমুখী প্রতিভাধর লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অন্যান্য পরিচয়ও কম নয়- ভাস্কর, স্হপতি, সংগীতজ্ঞ, সমরযন্ত্রশিল্পী এবং বিংশ শতাব্দীর বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য জনক। ১৪৬৯ সালে রেনেসাঁসের অপর বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর আন্দ্রেয়া ভেরোচ্চিয়োর কাছে ছবি আঁকায় ভিঞ্চির শিক্ষানবিশ জীবনের সূচনা। ১৪৭২ সালে তিনি চিত্রশিল্পীদের গীল্ডে ভর্তি হন ।১৪৭৮ সাল থেকে ১৫১৬-১৭ এবং ১৫১৯ সাল অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত গির্জা ও রাজপ্রাসাদের দেয়ালে চিত্রাঙ্কন এবং রাজকীয় ব্যাক্তিবর্গের ভাস্কর্য নির্মাণের পাশাপাশি বেসামরিক ও সামরিক প্রকৌশলী হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্ঞানের প্রয়োগ, অঙ্গব্যাবচ্ছেদবিদ্যা, জীববিদ্যা, গণিত ও পদার্থবিদ্যার মত বিচিত্র সব বিষয়ের ক্ষেত্রেতিনি মৌলিক উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন।

 ফ্লাইং মেশিন

নিউটনেরও দু’শো বছর আগে লিওনার্দোর সময়ে একমাত্র যে উপায়ে বৈজ্ঞানিক ধারণাসমূহ প্রকাশ করা যেত তা হচ্ছে সেই বিষয়ে একটি বই প্রকাশ করা । এভাবেই গ্যালিলিও এক গাদা বই প্রকাশের মাধ্যমে বিজ্ঞানের ইতিহাসের গতিপথ পালটে দিয়েছিলেন । তার উল্লেখ্যযোগ্য দু’টো বই হচ্ছে, Dialogue on the Chief World Systems, Ptolemaic and Copernican (1632), এবং Discourses Concerning Two New Sciences (1638).লিওনার্দোর নোটবুকের  হারিয়ে যাওয়া এবং একে নিয়ে সংশয় সৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল মানব সভ্যতার উপরও । লিওনার্দোর বৈজ্ঞানিক কাজসমূহ প্রায় দুইশ’ বছর সভ্যতার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল । লিওনার্দো যে ধারণাগুলোকে আবিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু প্রকাশ করেননি সেই সমস্ত ধারণাসমূহ আবার নতুন করে আবিষ্কার করেছেন অন্য বিজ্ঞানীরা ।

কিন্তু লিওনার্দোর অসংখ্য পরীক্ষা,অনুধাবন,গবেষনা এবং সেগুলো থেকে প্রাপ্ত ফলাফল লিখে রাখা নোটবুকগুলো থেকে গেছে লোক চক্ষুর অগোচরে। । লিওনার্দো ঠিক কখন থেকে নোটবুক লেখা শুরু করেছিল সেটা বলা মুশকিল । কিছু কিছু ছবির পিছনে লিওনার্দো ব্যাক্তিগত নোট লিখে রাখতেন বা যাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে তাদের নাম ধাম লিখে রাখতেন । তিনি খুব কম সময়ই তার লেখালেখিতে তারিখ দিয়েছেন এবং তার আইডিয়া যাতে কেউ চুরি করতে না পারে সেজন্য লিওনার্দো মিরর ইমেজের মত অদ্ভুত উপায়ে তার নোটগুলোকে লিখতেন । ডান থেকে বামে লিখতেন তিনি এবং অক্ষরগুলো উল্টোদিকে ঘোরানো থাকতো । আয়নার সামনে নিলেই শুধুমাত্র প্রতিবিম্ব দেখে বোঝা যেতো আসলে কি লেখা আছে । এছাড়া সেগুলোর মধ্যেও তিনি তার নিজস্ব কোড ঢুকিয়ে দুর্বোধ্য করে দিতেন যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে তিনি কি লিখেছেন । লিওনার্দোর মত আইজাক নিউটনও তার নোটে বেশিরভাগ সময়ই সন তারিখ লিখতেন না । কিন্তু তার নোটগুলোকে ছয়টি পরিষ্কারভাগে ভাগ করা যায় যেখানে তার হাতের লেখা বা তার লেখার উপকরণ অনেক খানি ভিন্ন ।

 

ক্রস বো

খেয়ালী রাজকুমারের মত এলোমেলো ভাবে নোটবুকের পৃষ্ঠায় ভিঞ্চি তার চিন্তাভাবনা লিখে রেখে গেছেন । তার নোট এবং ড্রয়িং থেকে দেখা যায় যে লিওনার্দো ব্যাপক বৈচিত্র্যময় বিষয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন । তার চুড়ান্ত চিন্তাভাবনা কি তা বর্তমানে জানা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আর মজার বিষয় হচ্ছে যে, সবকিছুই তিনি অসমাপ্ত রেখে গেছেন । আসলেই কি লিওনার্দোর সবগুলো কাজ তার একক চিন্তাশক্তির ফসল নাকি তিনি অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে আরও ব্যাপক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে এনেছেন শক্তিশালী করে ? “ইটালিয়ান রেনেসা”, ১৩ শতকের শেষ থেকে ১৬ শতক পর্যন্ত এই সময়টি ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় । এই সময়ে ইউরোপের বিশেষ করে ইটালির জ্ঞান-বিজ্ঞান এর প্রত্যেকটি শাখা চরম উন্নতি সাধন করে । লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির তৈরী করা উড়োজাহাজএর বিভিন্ন মডেল নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক । কিন্তু ইতিহাস ঘটলে দেখা যায় যে, এই ধরনের কাজে গবেষণা শুরু হয়েছে লিওনার্দো এর জন্মের প্রায় এক শতাব্দী আগে থেকেই ।

চিন্তাশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে লিওনার্দো তার উড়োজাহাজের মডেলগুলো নির্মাণ করলেও সেগুলোর বাস্তবিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ সফল হয়নি । সে সময়টায় তিনি ভেবেছিলেন ফ্লাইং মেশিন, ক্রসবো, আরো এমন অনেক আবিষ্কারের কথা  যা আবিষ্কার হয়েছে অনেক পরে। খেলায়ালী রাজকুমার তাঁর চিন্তা গুলো নোট বুকে ধরে রেখেছিলেন বলেই না আমরা পেলাম । যদি না লিখতেন নোট বুকে, কি জিনিশটাই না হারাতাম!  আফসোস করার ও সুযোগ হতোনা, কারন আমরা জানতাম ই না কি হারিয়েছি।

লিওনার্দ দ্য ভিঞ্চি সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন নিচে –

                                       ১)    লিওনার্দ দ্য ভিঞ্চির জীবনী

                                      ২)    তুসকানের  পাহাড়ি এলাকায় জন্ম হলো একজন জগদ্বিখ্যাত শীল্পি, স্থপতি,সঙ্গীতজ্ঞ ও বিজ্ঞানীর

রেফারেন্স           https://en.wikipedia.org/wiki/Leonardo_da_Vinci

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন