পৃথিবী ক্ষণিকের, আরো ক্ষণিকের আমাদের এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবন। যে জীবনের মোহে আমাদের দিন রাত্রি এক হয়ে যায় , সে জীবন কতই না ভঙ্গুর!
এই ক্ষুদ্র জীবনকে আমরা কজনই বা সঠিক ভাবে কাজে লাগাই। কজনই বা মৃত্যুকালে নির্ভার থেকে ওপারে পাড়ি দেওয়ার আশা রাখি? কতজন মৃত্যুকালেও সত্যের সন্ধানে, সঠিক তথ্যের সন্ধানে, সঠিক জ্ঞানকে উপলব্ধি করার পথে থাকতে পারি!
আসুন এমন একটি ঘটনার সাক্ষী হই……
আবু রায়হান আল বিরুনী ছিলেন একজন চিন্তাশীল ও লেখক। তিনি খুবই ধার্মিক ছিলেন। তার মনে কোন গৌরব বা অহংকার ছিল না। তিনি সঠিকভাবে নামায রোজা করতেন এবং ইসলামের সকল হুকুম আহকাম মেনে চলতেন।কথিত আছে তার কলম তার হাতছাড়া হতোই না। জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত তিনি জ্ঞান অর্জন ও সত্যের শিক্ষাদানে ও শিক্ষা অর্জনের অবিরত ছিলেন। তিনি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যবরণ করেন। সারাজীবন কখনো প্রয়োজনে -অপ্রয়োজনে লেখা পড়া ও শিক্ষাদান থেকে বিরতি গ্রহণ করেননি।
আবুল হাছান আলী ইবনে ইছা বলেছেন,,,,,
” আবু রায়হান যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিলেন তখন আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। প্রবেশকালে আমি বুঝতে পারি যে তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছেন। তার যখন এই অবস্থা তখন তিনি আমাকে বললেন যে, শেষের বার আমরা যখন সাক্ষাৎ করেছিলাম তখন আমরা মিরাস নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, এবং আমি কিছু বলেছিলাম তা ভুল ছিল এখন তিনি তা বুঝতে পারছেন। তার জন্য আমার মায়া লাগলো এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি যখন এতটা অসুস্থ তখন তার সাথে এমন ( জটিল) এক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা ঠিক হবে কিনা।
তিনি উত্তর দিলেন, “আমি জানি যে আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি, কিন্তু বিচার্য বিষয়ে অজ্ঞ থাকার চেয়ে সেই বিষয়টাকে উপলব্ধি করা তুমি কি আমার জন্য ভাল মনে করো না। আমি তখন বিষয়টি পুনরায় বললাম আর তিনি তা আমার নিকট ব্যাখ্যা করতে লাগলেন। আমাদের কথাবার্তা শেষ হলে পরে আমি চলে গেলাম আর জানতে পারলাম যে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। কেবলমাত্র তার মত বিশাল হৃদয়ের লোকেরাই ঠিক শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত (মানসিকভাবে) শক্ত থাকেন।”
আল বিরুনি এত বড় পন্ডিত হওয়ার পরেও ছিলেন একজন সৎ ও ভাল লোক। তিনি বিশ্বাস করতেন, তাঁর অর্জিত জ্ঞান খুবই সামান্য। সকল জ্ঞানের উৎস হলেন আল্লাহ।
ঘটনাটি একটি সময়ের, একটি কালের। কালের খেয়ায় ভেসে যেমন ক্ষুদ্র জীবন অস্তাচলে হারায়। তেমনি আবু রায়হান বাইরুণী হারিয়ে গেছেন। টিকে আছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনাটি যা গুরুত্বের বিবেচনায় বিশাল !
কিন্তু এই ক্ষুদ্র ঘটনা আমাদের এই শিক্ষা দেয়,
জীবনের শেষ মুহূর্তে হারিয়ে যাওয়ার ভয় না করে, হারিয়ে ফেলার ভয় না করে,কতটা বিশ্বাস হৃদয়ে থাকলে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মানুষ সঠিক জ্ঞানের সন্ধানে থাকে। কতটা বিশ্বাস! কতটা সত্যের প্রতি ভালোবাসা।
(আল্লাহই সত্য সম্পর্কে ভালো জানেন, তিনিই সকল জ্ঞানের মালিক। )